চলে গেলেন ভারতের দুঃসময়ের বন্ধু।।১০ অক্টোবর ২০২৪
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন?আশা করি ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি পোস্ট লেখা শুরু করছি।আজকে আমি রতন টাটা স্যার এই হঠাৎ চলে যাওয়া নিয়ে করবো কিছু লিখবো।উনার সম্পর্কে যা লিখবো তাই কম হবে।
রতন টাটা, যিনি আজ আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন, ভারত এবং বিশ্বব্যাপী এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।একজন সফল শিল্পপতি হিসেবে তার অবদান যেমন অনন্য তেমনি একজন মানবপ্রেমী, সমাজসেবক এবং দৃষ্টান্তমূলক নেতা হিসেবে তার জীবন ছিল অনুপ্রেরণার এক বিরাট উৎস।
ব্যবসায়িক অবদান:
রতন টাটা তার কর্মজীবনের শুরু করেছিলেন ১৯৬২ সালে টাটা গ্রুপের সাথে যোগদানের মাধ্যমে।তবে তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন ১৯৯১ সালে যখন তার চাচা জে. আর. ডি. টাটা তাকে এই দায়িত্ব দেন।রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ একের পর এক অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে এবং শুধু ভারতের মাটিতেই নয় বিশ্ব বাজারেও প্রতিষ্ঠিত হয়।
১. টাটা মোটরস ও ন্যানো গাড়ি:
রতন টাটা সবসময় সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার স্বপ্ন দেখতেন।তার সেই স্বপ্নের একটি বাস্তব উদাহরণ হলো "ন্যানো" গাড়ি যা বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি হিসেবে পরিচিত।সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারকে গাড়ি কেনার ক্ষমতা প্রদান করা ছিল তার লক্ষ্য।এই গাড়িটি ভারতের গাড়ি শিল্পে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল।
২. টাটা গ্রুপের বিশ্বজয়:
রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ শুধু ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং বিশ্ববাজারেও নিজেদের স্থান করে নিয়েছে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার অধিগ্রহণ যা টাটা গ্রুপকে একটি বৈশ্বিক স্তরে নিয়ে যায়।এছাড়াও ইউরোপের স্টিল জায়ান্ট করাস অধিগ্রহণের মাধ্যমে টাটা স্টিলকে বিশ্বের বৃহত্তম স্টিল উৎপাদনকারী কোম্পানির তালিকায় নিয়ে আসে।
৩. টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS):
রতন টাটার অধীনে TCS (টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস) এক বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় পরিণত হয়।বর্তমানে TCS বিশ্বজুড়ে অন্যতম শীর্ষ আইটি কোম্পানি যা লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান প্রদান করছে এবং ভারতের প্রযুক্তি খাতকে বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মানবিক অবদান:
রতন টাটা শুধু একজন সফল শিল্পপতি নন, তিনি একজন দানশীল এবং সমাজসেবী হিসেবেও ছিলেন শ্রদ্ধেয়। তিনি তার কোম্পানির মুনাফার বিশাল অংশ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতেন যা তাকে ভারত এবং সমগ্র বিশ্বের মধ্যে একজন ব্যতিক্রমী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
১. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অবদান:
রতন টাটা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন।তার প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন এবং ট্রাস্টগুলোর মাধ্যমে তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি প্রদান করেছেন যা তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।এছাড়াও টাটা ট্রাস্টের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়।
২. দানশীলতা ও মানবসেবা:
রতন টাটা সবসময় বিশ্বাস করতেন যে ব্যবসার প্রকৃত সাফল্য তখনই আসে যখন তা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজে লাগে।তার এই বিশ্বাস থেকে তিনি অনেক সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।২০০৪ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি ছিল সুনামি আর সেই সময়ে টাটা গ্রুপ বিপুল অর্থ সাহায্য করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়।তিনি ব্যক্তিগতভাবেও অনেক দান করেছেন কিন্তু কখনো তা প্রচার করেননি বরং নীরবতার সাথে মানুষের পাশে থেকেছেন।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধ:
রতন টাটার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ।তিনি কখনোই কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে আপস করেননি।তার নৈতিক ব্যবসায়িক নেতৃত্ব তাকে অন্যান্য শিল্পপতিদের থেকে আলাদা করেছে।তার কোম্পানির সাফল্যের ভিত্তি ছিল তার সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কর্মীদের প্রতি তার বিশ্বাস।
১. কঠিন সময়ে দৃঢ় নেতৃত্ব:
রতন টাটা বিভিন্ন সময়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু কখনোই হার মানেননি। ২৬/১১ মুম্বাই হামলার সময় টাটা হোটেলগুলোর উপর আক্রমণ হয়েছিল কিন্তু তিনি সাহসের সঙ্গে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন এবং হোটেল কর্মচারীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।তিনি সেই ঘটনার পরে হোটেল পুনরায় চালু করার জন্য কর্মচারীদের এবং শহরবাসীর মনোবল ধরে রাখেন।
পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে অবদান:
রতন টাটা সবসময় পরিবেশের প্রতি যত্নবান ছিলেন।তিনি টাটা গ্রুপের বিভিন্ন প্রকল্পে টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যেন তা পরিবেশের ক্ষতি না করে।তার উদ্যোগে টাটা গ্রুপের বিভিন্ন প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা তার ভবিষ্যৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রমাণ।
রতন টাটা তার জীবন দিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে নৈতিকতা, মানবিকতা এবং ব্যবসায়িক সাফল্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।তার অবদান শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।তিনি একজন মহান নেতা, একজন সফল শিল্পপতি এবং একজন মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।তার চলে যাওয়া এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে যা কখনো পূরণ হবার নয় কিন্তু তার কর্ম ও আদর্শ আমাদের প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working. Discord
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi
Hi @blacks,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
অনেক বড় একজন মানুষ ছিলেন উনি। ব্যবসায়ী হিসেবে না মানুষ হিসেবে অনেক বড় ছিলেন। উনার মতো দান হয়তো বিশ্বের আর কোন ধনী করেনি। খবর টা আগে জানতাম না। আপনার পোস্ট থেকেই জানতে পারলাম। উনার সম্পর্কে বেশ সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন দাদা।
ভারতবাসীর প্রতিটা লোকের মতো আমিও খুব দুঃখিত যে আমাদের দেশ থেকে একটা রত্ন চিরজীবনের জন্য চলে গেল। আসলে এই মানুষটি নিঃস্বার্থে একটা দেশের জন্য যা কিছু করেছে তা আমাদের জন্য একটা শিক্ষনীয় বিষয়। আসলে তিনি চলে গেলেও তার ভালো কাজগুলো এখন আমাদের দেশে থেকে গেছে। আমরা অবশ্যই তার চলা পথে যাওয়ার চেষ্টা করব। আসলে দাদা আপনি এই মহৎ ব্যক্তিটির সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন সত্যিই সেগুলো পড়তে পেরে আরো এই ব্যক্তিটির সম্পর্কে ভালোবাসা বেড়ে গেল।
কালকে রাতে আপনি যখন ডিসকর্ডের এনাউন্সমেন্ট চ্যানেলে উনার মৃত্যু সংবাদ শেয়ার করেছিলেন,তখন সত্যিই খুব খারাপ লেগেছিল। উনার মতো দানশীল মানুষ পৃথিবীতে খুব কম রয়েছে। উনি সত্যিই অনেক ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
ভদ্রলোক যে আপনার আইডল ছিলেন, তা কিন্তু একবার দাদা আপনি আড্ডাতে এসে বলেছিলেন। সত্যিই ব্যাপারটা শুনে বেশ খারাপ লাগলো। তবে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।