আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ৬৬ শীতকালীন সেরা ফটোগ্রাফি
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
শীতের হাওয়া হঠাৎ ছুটে এল
গানের বেলা শেষ না হতে হতে?
মনের কথা ছড়িয়ে এলোমেলো
ভাসিয়ে দিল শুকনো পাতার স্রোতে।
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হেমন্তের পর প্রিয় ঋতু মানেই শীত। যতদিন পশ্চিমবঙ্গে থাকতাম, ততদিন পর্যন্ত শীত সম্পর্কে একরকম ধারণা ছিল। শীতের সকাল মানেই, আগুন পোহানো, কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া প্রকৃতি। আর আমরা সবাই সোয়েটার চাদর হনুমান টুপি মাথায় জুবুথুবু প্রাণ। এইসব ছাড়াও শীতের উল্লেখযোগ্য ছিল, ধান ওঠা খামার, ছাদ ভর্তি বড়ি আচার, বাগানের নানান ধরনের ফুল, সবজি, পিঠেপুলি ইত্যাদি। তবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, আবহাওয়ার তফাৎজনিত কারণে শীতকালের ভিন্ন ধরনের প্রকৃতি দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। মাঝের এক বছর গোয়া জীবন বাদ দিলে, প্রায় নয় থেকে দশ বছর আমি মহারাষ্ট্রের অধিবাসী। মুম্বাইতে যখন থাকতাম তখন শীতের কোন পরশ ছিল না, প্রকৃতির পরিবর্তন বলতে ঝকঝকে নীল আকাশ। ব্যস- শহরে আর বিশেষ কোন পরিবর্তন দেখিনি। ও হ্যাঁ তীব্র ধুলোর ভিড় উল্লেখযোগ্য ঝামেলা বটে, যা পুনেতেও পাচ্ছি৷ তবে মুম্বাইয়ের তুলনায় পুনেতে বেশ ভালই ঠান্ডা পড়ে। বিগত দুদিন তো রীতিমতো সোয়েটার গায়ে দিতে হচ্ছে।
প্রতিযোগিতার অ্যানাউন্স যেদিন হল, সেদিন থেকেই ভেবেছি আমি তো আর বাংলার মত ছবি তুলে দেখাতে পারবো না, অন্যপ্রান্তের ভিন্ন ছবি দেখাই। কারণ শীতকাল মানেই যে সব জায়গায় একই রকম দৃশ্য দেখা যাবে তা কিন্তু নয়। এদিকে সকালবেলায় কেমন ওয়েদার থাকে আমার কোনদিনই দেখার খুব একটা সুযোগ হয় না। কারণ ঘুম ভাঙা থেকেই আমার একপ্রকার ম্যারাথন দৌড় চলে। যখন মুখ তুলি তখন প্রায় নটা বেজে যায়। সকাল আর সকাল থাকে না, বেলা হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিযোগিতার কারণে গত রবিবার আমি ঠিক করলাম একটু ভোরের দিকে উঠে নিচে চলে যাব। যেহেতু রবিবারের বাজার, আমার ভোর আর কিছুতেই হতে চায় না। তাও ঠেঙিয়ে ঠেঙিয়ে সাড়ে সাতটার দিক করে নিচে নামলাম। সামনেই বেশ বড় একটা মাঠ রয়েছে এবং একদিকে খাল আছে। ভাবলাম সবমিলিয়েই একটা ফটোগ্রাফি করি। ভাগ্যিস এদিকে সূর্যোদয়টা দেরি করে হয় তাই সাড়ে সাতটাতেও বিরাট রোদের চহট নেই।
বেশ কিছু ফটোগ্রাফি করে বাড়ি চলে আসার পর ভাবলাম, বাড়ি থেকে মাত্র এক-দেড় ঘণ্টা দূর এ লোনাভালা অর্থাৎ পাহাড়ি অঞ্চলে (আমিরখানের বিখ্যাত আতি কা খান্ডালা) চলে যাই, সেখানের পরিবেশটা ফটোগ্রাফি করার জন্য দুরন্ত। আর এই সময় লোকজনও তুলনামূলক ভাবে কম থাকে৷ যেই ভাবা ওমনি বেরনো। চলে গেলাম। সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর হঠাৎই খেয়াল হল আরও ত্রিশ কিলোমিটার এগোলে পাওনা লেক৷ এবং ড্যামও আছে৷ এসেছি যখন ঘুরেই নিই। আর ওই পথেই যেহেতু ফেরা তাই চলে গেলাম। সেখানে জঘন্যতম একটা লাঞ্চ সেরে টুকটুক করে লেকের ধারে গিয়ে বসলাম। বেশ কিছু সময় কাটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরে এলাম।
আর দেরি না করে সরাসরি ফটোগ্রাফির দিকে যাই। একদিনে হ্যারিক্যান গতিতে ফটোশ্যুট করেছি যে৷ হা হা হা।
শীতের সকাল
পর্ব-১
আমাদের পশ্চিমের শীতের ঘরোয়া দিনে অত্যন্ত ঘরোয়া সকালের ছবি তোলার পর যখন ছবিগুলো দেখছিলাম মনে হচ্ছিল এ যেন অতিথি আগমনে প্রকৃতি এতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে৷ এতো সুন্দর সকাল, অথচ রোজই আসে, এতোগুলো দিন আমি না দেখেই কাটিয়ে দিলাম। আরও কত দেব না৷ না দেখতে দেখতে একদিন আমিই ফুরিয়ে যাবো। তখনও সকাল এমনই যুবতী থাকবে৷ আহা শীত তুমি বসন্তের আগে কেন আসো? কেনই বা ক্ষণিকের হীমের পরশ এনে নাড়িয়ে দাও যাপনচিত্র? আমি যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করব কোন একদিন তোমাতেই বিলীন হয়ে যাবার...
শীতের পাহাড়
শীতের পাহাড়ে সেভাবে সবুজের ছোঁয়া থাকে না। এ পাতা ঝরার সময়, তাই এই পাহাড়ের গায়ে যত দুধ সাদা ঝরণা একদিন মনের আনন্দে ঝরে পড়ত তারা সব শুকিয়ে গেছে। মেঘবালিকারাও কোথায় চলে গেছে। কোথাও কিছুর দেখা নেই৷ কেবল নীল আকাশ৷ যতদূর চোখ যায় ঘন নীল৷ উফফফ যেন পৃথিবী নীল কণ্ঠে ধারণ করে শরীরে মেখে নিয়ে জানান তার বিশেষ রূপকথার গল্পে প্রেম নিবেদনও একপ্রকার উৎসব।
একটু ভালো করে দেখলে বোঝা যায় পাহাড়ে কুয়াশার স্তর। সারাদিনই প্রায় থাকে। ছেড়ে যাবার কথা ভাবলেও যেন তাদের গায়ে জ্বর আসে।
শীতের লেক/জলাশয়
আকাশ নীল, জলও নীল। একে বলে প্রতিবিম্ব। কার? আমার নাকি রঙের নাকি সূর্যের নাকি... আমাদের ভালোবাসার রঙ লাল বলে যারা তারা কখনও নীলের প্রেমে পড়েনি৷ পড়লে জানত, বর্ষার তীব্রতা কেটে গেলে সব কিছু স্বচ্ছ হয়। ঠিক যেমন পাওনা লেক।
শীতের হলুদ ঘাস ও চেনা অচেনা ফুল
[লোকেশন- ওপরের তিনটি লোকেশনেই তোলা তাই আলাদা করে দিলাম না। ]
ঘাস বলতে এতোদিন আমরা সবুজের সমারোহই জেনে এসেছি৷ কিন্তু শীতকালে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সমস্ত সবুজ ঘাসই হলুদ হয়ে যায়৷ দূর থেকে মনে হয় যেন হেম বর্ণের গালিচা পেতে দিয়েছে পাহাড়রাজ৷ সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছে নাম হীন জাতহীন অচেনা অপূর্ব ফুল ফুটিয়ে৷ এসো পর্যটক, এসে দেখে যাও, মৃত ঘাসেরাও কেম্ন সেজে উঠেছে শীতের তালে৷
শীতের সূর্যাস্ত
এবং আরও একটি দিনের শুরু করার উদ্দেশ্য নিয়ে ভানু গেল অস্তে। আমরাও ফিরে এলাম নিজ নিজ ঘরে৷ পায়ে পায়ে উঠে এলো আমাদের অন্তরঙ্গ কথা, ঘুম আর জেগে থাকা৷ পৃথিবী বড় সুন্দর। এ কথা বুঝতেই কেটে গেছে ছত্রিশ বছর। তার মধ্যে আঠেরোটি ছিল অজ্ঞাতবাসে৷ এখন আবার নতুন করে প্রতিদিন জন্ম নেওয়ার পালা।
শীতের হেঁসেল
বাঙালিয়ানা থেকে চাইনিজ শীতে আসলে সব খাবারই প্রিয়। অনেক ধরণেরই খাবার বানাই শীতের দিনে৷ আপনাদের সাথে সেসবের আলাদা রেসিপি শেয়ার করি৷ তাই এখানে কম ছবিই দিলাম। পিঠেপুলি থেকে গয়না বড়ি আমাদের ঐতিহ্য। আর চাইনিজ ম্যাঞ্চাও সুপে চিকেন ডাম্পলিং তো আলাদাই ব্যপার কি বলব আলাদা করে বলুন৷
শীতকালীর ছবি শেয়ার করলাম কিছু৷ আশাকরি পশ্চিমের আরব সাগরের বাতাসে যেই শীতের গন্ধ তা আপনাদেরও ভালো লাগবে।
বন্ধুরা আজ এপর্যন্তই। টা টা
সমস্ত ছবিই আনএডিটেড এবং নো ফিল্টার
পোস্টের ধরণ | ফটোগ্রাফি পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন-১৪ |
লোকেশন | পুনে, ভারতবর্ষ |
ব্যবহৃত অ্যাপ | অনুলিপি কভার ছবিতে লেখার জন্য ব্যবহার করেছি। বাকি সব আন এডিটেড ছবি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক সুন্দর কিছু শীতকালীন ফটোগ্রাফি ধারণ করে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। আপনার শেয়ার করা শীতকালীন ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। শীতকাল আসলেই যেন প্রকৃতিতে অন্য রকমের একটা সৌন্দর্য চলে আসে।
অনেক ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া। আমার তোলা ছবিগুলো আপনার এতখানি পছন্দ হয়েছে জেনে আনন্দিত হলাম।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দারুন সুন্দর একটি অ্যালবামের সাক্ষী থাকতে পারলাম। প্রত্যেকটি ছবি ভীষণ প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল হয়েছে। লেক পাহাড় এবং অবশেষে খাবার মিলিয়ে একেবারে পরিপূর্ণ একটি শীতের অ্যালবাম। প্রতিযোগিতার জন্য অনেক শুভকামনা পাঠিয়ে দিলাম। আশা করি বেশ ভালো স্টিম জিতে একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছবে৷ এত সুন্দর সব ছবি কখনোই বিফলে যাবে না।
তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম৷ চেষ্টা করেছি। এবার আর কোন এডিটে যাইনি। সরাসরি পোস্ট করলাম।
শীতকালীন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যময় ফটোগ্রাফি করেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। কি অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলাম।
https://x.com/neelamsama92551/status/1869095710811177447?t=eGWWzxCsGYbUBK43-27kZg&s=19
দারুন কিছু ফটোগ্রাফি কে সাথে নিয়ে আপনি আপনার পোস্ট শেয়ার করেছেন এবং প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছেন।আপনার শেয়ার করা প্রতিটি ফটোগ্রাফি আমার কাছে দারুন লেগেছে। এক কথায় অসাধারণ। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
আপু আমি চেষ্টা করেছি ছবিগুলো ভালো করে তোলার। তা যে আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু। ধন্যবাদ জানবেন।
আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতায় নিজের নাম লেখানোর জন্য। শীতের সূর্য উদয় থেকে শুরু করে অস্ত যাওয়ার পর্যন্ত বেশ চমৎকার সব ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। আপনার ফটোগ্রাফি আরও সুন্দর করতে বানর আর কুকুর মনে হচ্ছে আপনাকে বেশ সাহায্য করেছে। তাদের ফটোগ্রাফি গুলো স্পেশাল হয়েছে। আপনার প্রতিটা ফটোগ্রাফি অসাধারণ হয়েছে। ধন্যবাদ আপু এত চমৎকার সব ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
হ্যাঁ হনুমান আর কুকুর তো সহায়তা করেইছে, তবে জানেন কুকুরটার একটা আলাদা গল্প আছে সেটা অন্য কোন একদিন ব্লগে শেয়ার করব। সব কটা ছবি আপনার ভালো লেগেছে জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছি। অনেক ধন্যবাদ নেবেন আপু।
বাহ আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে শীতকালীন দারুন কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। আপনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফি গুলো বেশ অসাধারণ ছিল। শীতের সকালে কুয়াশার ঝিরিঝিরি ফটোগ্রাফি গুলো বেশ অসাধারণ। আমি তো সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠতে বেশ ভয় পাই শীতের মধ্যে তাই ফটোগ্রাফি করে পোস্ট শেয়ার করতে পারেনি। এত সুন্দর আপনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে সত্যি বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ দাদা, আমি চেষ্টা করেছি ছবি তোলার। একদিন সারাদিন তো ছবি তোলার কাজেই কাটিয়ে দিলাম। তবে ছবি তোলার উদ্দেশ্যে ছোটখাটো একটা ভ্রমণও হয়ে গিয়েছিল আমার। যাই হোক আমার একদিনের পরিশ্রম আপনাদের যে সবার ভালো লাগছে এটা জেনে অত্যন্ত খুশি হলাম। এটাই তো প্রাপ্তি বলুন।