শৈশবের মৎস্য শিকার।
হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই ?
আপনারা যারা নব্বইয়ের দশকের তাদের ছোটোবেলায় ফেলে আসা কত শত স্মৃতি এখনো মনে পড়ে তাই না ?? আমরা নব্বইয়ের দশকের যারা আছি তারা একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম আবার ভদ্র ও ছিলাম। আমরা যতই দুষ্টুমি করতাম ভদ্রতা বলতে যে জিনিসটা থাকা প্রয়োজন সেটা আমাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু এখনকার বেশিরভাগ ছেলেপুলে গুলোর মধ্যে ভদ্রতার অভাব আছে। আমরা যতই দুষ্টুমি করতাম শিক্ষকদের কিন্তু কখনো অসম্মান করিনি । কিন্তু এখন এটা হরহামেশাই দেখা যায়।
যাইহোক, আমাদের ছোটবেলায় বহু স্মৃতি আছে যেগুলো এখনকার ছেলেপুলের কাছে একেবারেই আননোন৷ আমার ছোটবেলার কিছু মাছ ধরার স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করি। তখন আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। বাড়ির পাশে একটা ছোট্ট দোকান ছিল। ওই দোকানে ছোট ছোট পুটি মাছ ধরা বড়শি পাওয়া যেতো। শোল মাছ ধরা বড়শি ছিলো একটু বড়। আমাদের বয়সি ছেলেগুলো সবাই ওই দোকান থেকে বড়শি, সুতা, কল, সীসা এগুলো কিনে নিয়ে বড়শি ছীপ বানিয়ে নিতো। আমার বানানো বড়শি প্রায় দিনই কোনো না কোনো ভাবে নষ্ট হয়ে যেত। কখনো ছীপ থেকে বড়শি ছিড়ে যেত, কখনো সুতা পেঁচিয়ে যেত। বিভিন্ন রকম ভাবে নষ্ট হয়ে যেত আর আমি আবারো সবকিছু কিনে বড়শির ছীপ রেডি করে ফেলতাম। একটা নেশার মতন ছিল এগুলো করে বেড়ানো।
আমাদের বাড়ির পাশে আমাদের অনেক বড় একটা পুকুর ছিল। চাচাতো ভাইদের সাথে যখন থাকতাম তখন আমাদের নিজেদের পুকুরের পুটি মাছ ধরতাম। আর আমরা ছোটখাটো যেগুলো ছিলাম, সবাই একসাথে থাকলে চলে যেতাম বাড়ির পাশের ছোট খালে। তবে যেসব জায়গায় মাছ চাষ করা হতো ওইখানে আমরা বড়শি ফেলাইতাম না। আর আমরা মাছ ধরতাম ডাই এর ডিম দিয়ে। পুটি মাছ ধরতাম আটা দিয়ে, আর শোল মাছ, কৈ মাছ এগুলো ধরতাম ডাই এর ডিম দিয়ে। আমি সবচেয়ে বেশি মজা পেতাম কৈ মাছ ধরে। আর এসব মাছ ধরতে যে ডাইয়ের ডিম আমরা ব্যবহার করতাম সেগুলো সংগ্রহ করা ছিল বিশাল এক চ্যালেঞ্জার।
আমি সাধারণত কখনো নিজে সংগ্রহ করিনি। আমি সবসময় কিনে নিতাম। কিছু পোলাপান ছিল, ওরা ডাইয়ের বাসা ভেঙে ডিম সংগ্রহ করতো। তারপর সবার কাছে বিক্রি করতো। ১২ টাকা কৌটা বিক্রি হতো। আমি দু এক দিন পর পর একটা করে কিনতাম। একদিন সাহস করে আমার এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলাম ডাই এর ডিম সংগ্রহ করতে। সেদিন এত পরিমাণে ডাইয়ের কামড় খেয়েছিলাম যে জীবনে আর ভুলেও ডাই বাসা ভাঙতে যাওয়ার কথা মুখেও আনিনাই। যদিও এগুলো বাড়িতে বলতাম না। কারণ বাড়িতে বললে আমার নির্ঘাত মাইর খাওয়া লাগতো।
আমি অনেক সময় মাছ ধরে আমার সাথে যারা থাকতো তাদেরকে দিয়ে দিতাম। বাড়িতে আনতাম না। মাছ ধরাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় আনন্দের ছিল। আমি মাছ ধরেই শান্তি পেতাম। আমাদের পুকুর বছরে একবার পানি সম্পুর্ণ সেচে মাছ ধরা হতো। আমিও হাফপ্যান্ট পড়ে নেমে যেতাম। আমাদের পুকুর ছিলো আমাদের গ্রামের সবচেয়ে বড় পুকুর। যখন পুরো পুকুর সেচে ফেলে মাছ ধরা হতো তখন গ্রামবাসী সবাই পুকুরের চারপাশে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা দেখতো। আমি যখন মাছ ধরতে নামতাম ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগতো। যারা সেচে ফেলা পুকুরে নেমে মাছ ধরেছেন তারা জানেন এর মজা।
এরকম বহু মাছ ধরার মুহূর্ত আছে যেগুলো সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল। আমি স্কুল থেকে এসেই হাতে ছীপ নিয়ে যখন পুকুরে চলে যেতাম তখন আম্মুর কাছে কতই না বকা খেয়েছি। তবে আম্মু খুশি হতো যখন আমাদের নিজেদের পুকুর থেকে বড় বড় সাইজের মাছ ধরে আনতাম । তখন আম্মু সেটা রান্না করত। আমার খুবই মজা লাগতো আমার নিজের ধরা মাছ রান্না খেতে। বাজার থেকে কিনে আনা মাছ রান্না করলে অনেক সময় খেতে চাইতাম না। কিন্তু আমার নিজের ধরা হলে আমি খুবই আনন্দ সহকারে খেতাম।
আমার আরও একটা মজার ঘটনা মনে আছে। ঈদের আগের দিন রাত্রে আমি আর আমার বয়সি বন্ধুরা সবাই বাড়ির পাশের মাঠের মধ্যে গিয়েছিলাম। মাঠের মধ্যে একটা রাস্তা আছে। তখন অনেক পানি ছিল মাঠে। আর সেই পানিতে অনেক মাছ ছিল। প্রচুর বৃষ্টিতে পুকুরের সাথে যখন মাঠ ভেসে গিয়েছিল তখন এই মাছগুলো মাঠে উঠে এসেছিল। আমরা অনেকক্ষণ চেষ্টা করে কয়েকটা শোল মাছ ধরেছিলাম ওইখান থেকে। আমি আর আমার একটা বন্ধু ছিল ওই সময় ডিস্কোভারিতে বেয়ার গ্রিলসের অনুষ্ঠান গুলো দেখতাম। আর খেলার ছলে সেগুলো ফলো করার চেষ্টা করতাম। তো সেদিন আমাদের প্ল্যান ছিল মাছ পুড়িয়ে খাওয়ার। সেদিন মাছ ধরার পর আগুনে পুড়িয়ে আমরা সবাই খেয়েছিলাম। যদিও তেমন একটা ভাল লাগছিল না। তার পরেও কেন জানি না খুব মজা পাইছিলাম সেদিন। সত্যিই ভালো লাগে দিনগুলোর কথা মনে পড়লে।
যাই হোক, আমার এরকম মাছ ধরার অনেক অনেক গল্প আছে। যেগুলো এখন মনে ছিলো সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এখন তো আর ওই ভাবে মাছ ধরা হয় না। তবে সুযোগ পেলে মাছ ধরার চান্সটাও মিস করবো না কখনো। এখন আমি বিদায় নিচ্ছি । দেখা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ্ হাফেজ।
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
একদম ঠিক বলেছেন দাদা, বর্তমানে বাচ্চাদের মধ্যে ভদ্রতার অভাব আছে।
দাদা,ডাইয়েটা কি?
আসলে আমরা বোলতার চাক থেকে ডিম সংগ্রহ করে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম। আপনার লেখা পড়তে পড়তে আমার ও মাছ ধরার কথা মনে পড়ে গেল।এটা ছিল আমার কাছে নেশার মতো।কখনো বড়শি দিয়ে মাছ ধরা,তো কখনো ক্যানেলের জল সরিয়ে দিলে হাত চেপে মাছ ধরা।আমার তো জলের মধ্যে হাত দিয়ে মাছ ধরতে বেশি মজা লাগতো।বড়শি দিয়ে মাছ ধরা খুবই ধৈর্য্যের বিষয় ছিল।ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে,ধন্যবাদ আপনাকে।
No dinks here.
আসলে মাছধরা একটি নেশা আর ছোটবেলায় এই নেশা প্রায় প্রত্যেকেরই থেকে। বিশেষ করে আমরা যারা গ্রামে বসবাস করছি, তাদের মাছ ধরার একটা নেশা ছিল। ছোটবেলা বিলে মাছ ধরতে যেতাম এবং বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম। আপনার মাছ ধরার গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
আপনার ছোট বেলার মাছ ধরার গল্পটা অনেক ভালো লাগলো ৷ সত্যিই মাছ ধরা একটা নেশা ৷ আমাদের গ্রামে এখনো অনেকে বড়শি সুতা দিয়ে মাছ ধরে ৷যদিও এটা আগের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে ৷ আমিও বড়শি সুতা দিয়ে মাছ ধরতাম ছোট বেলায় নদীতে ৷ যদিও বড়শিতে মাছ ধরতো অনেক সময় পর , তবুও বিরক্ত লাগলো না ৷ ভালোই লাগতো নদীর ধারে বসে মাছ ধরতে ৷
ঠিক বলেছেন ভাইয়া আগেকার দিনের ছেলেমেয়েদের আর এখনকার দিনের ছেলে মেয়েদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
চাষ করা পুকুরে মাছ ধরে কি বিপদে পরবেন নাকি। সেই ভয়েই চাষ করা পুকুরে মাছ ধরতে যেতেন না। আর বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরতে যে বিভিন্ন ধরনের খাবার দরকার তা আজকেই জানলাম। মাছ ধরা আমার কাছে খুবই ধৈর্যের কাজ মনে হয়। তারপরও আপনার ছোটবেলার গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
দাদা আপনার ছোট্ট বেলার মাছ ধরার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷হুম দাদা ছোট বেলায় সিপ দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা ৷আমি ও সিপ দিয়ে মাছ ধরেছিলাম আমি আবার নদীতে ধরেছি তাও আবার মাটি ঘুরে যে চেরা তা দিয়ে ৷এছাড়াও ময়দা তাতে ডিম দিয়ে ও ধরেছিলাম ৷
শৈশব জীবনটা সত্যি অনেক মজার ছিল ৷
ভালো লাগলো গল্পটি ৷
শৈশবে মাছ ধরার স্মৃতি সত্যিই অসাধারণ। আমিও শৈশবে পুকুরের জল সেচে বরশি দিয়ে অনেক মাছ ধরেছি। এইসব করার কারণে বাড়ি থেকেও অনেক বকাও শুনেছি। সত্যি বলতে মাছ ধরা একটা নেশা। এই নেশা এখনো জাগে, মাঝে মাঝে যখন বাড়িতে যায়। শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত এমন সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
জি ভাইয়া আমরা ৯০ দশকের ছেলে হলেও দুষ্টুমি করতাম ভদ্রতার মধ্যে থেকে। ছোটবেলায় কত যে মাছ ধরেছি তার কোন হিসেব নেই। যখন চারিদিকে পানিতে করতে করতে তখন বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে আমি ব্যবহার করতাম লাল বোল্লার চাক ভেঙে চাকের ভিতরে থাকা ছোট কচি বাচ্চা। ওই কচি বাচ্চা দিয়ে কৈ এবং জিওল মাছ খুবই বেশি ধরা যেত। আর শীতের মৌসুমে পাড়ার সমবয়সী সকল ছেলেদেরকে নিয়ে বিলে মাছ ধরতে যেতাম। ছোটবেলার মাছ ধরার স্মৃতিগুলো খুবই মনে পড়ে।
ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন ৯০ দশকের আমরা যারা ছিলাম যতই দুষ্টামি করি না কেন আদব কায়দা বজায় রেখেই করতাম। তবে এখন সেই আদব কায়দা একেবারেই ভুলে গেছে এখনকার ছেলেমেয়েরা। আপনার মৎস্য শিকারের গল্প শুনে বেশ ভালোই লাগলা। তবে যতই ডাইয়ের কামড় খাই না কেন ডাইয়ের ডিম সংগ্রহ করা ছিল আমার প্রথম কাজ। আর আমাদের অঞ্চলে আমরা লাই পিঁপড়ায় বলি, লাই পিঁপড়ার ডিম ভাঙতে প্রচুর কামড় খেতে হয়। যা অগণিত হাত পাও একেবারে লাল হয়ে যেত। এখনও মাছ ধরা বন্ধ করতে পারি নাই। এই তো গত কয়েকদিন হল বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ ধরেছিল বেশ আনন্দ পেয়েছি, তবে আমিও শেয়ার করব আমার মৎস্য শিকারের অনুভূতি। আপনার মত শিকারের গল্প করে খুবই আনন্দ পেয়েছি আমাদেরকে এত সুন্দর গল্পগুলো উপহার দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
ডাই মানে কী? পুকুরে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা দারুণ তো। আমার বড় মাসির বাড়িতে একটা পুকুর ছিলো। দাদারা মাছ ধরত। আমায় পাড়ে দাঁড় করিয়ে রাখত।আর সত্যি বলতে আমারও ভয় করত। আমি ওই স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে হাত তালি দেওয়া পাবলিক। 😛 আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে আমার চোখের সামনে যেন ভাসলো ঘটনা গুলো। ভালো উপস্থাপন করেছেন।