১৩০ তম জন্মদিনে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মদিন নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করলাম আপনাদের সাথে। যার লেখায় প্রেম, প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মচেনায় নিগুঢ় তত্ত্ব বিদ্যমান।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা, যাঁর রচনায় প্রকৃতি, মানব জীবন এবং অস্তিত্বের গভীরতা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তিনি ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার মুরাতিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের সাধারণ জীবন, প্রকৃতির নিরবচ্ছিন্ন সৌন্দর্য এবং মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সহজাত সম্পর্ক তাঁর লেখার মূল উপজীব্য ছিল।
শৈশব ও শিক্ষাজীবন:
বিভূতিভূষণের শৈশব কেটেছে গ্রামবাংলার প্রকৃতির কোলে। এ কারণেই তাঁর রচনায় প্রকৃতির এত গভীর ও জীবন্ত চিত্র ফুটে ওঠে। তিনি কাঁচরাপাড়া স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য জমিদারদের হিসাবরক্ষণ কাজও করেছিলেন। এই সাধারণ জীবনযাত্রা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং তাঁর লেখায় এটির প্রতিফলন স্পষ্ট।
সাহিত্যিক যাত্রা:
বিভূতিভূষণের প্রথম সাহিত্যিক সাফল্য আসে ছোটগল্পের মাধ্যমে। তবে তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ও বিখ্যাত রচনা হলো "পথের পাঁচালী" (১৯২৯), যা বাংলা সাহিত্যের এক মাইলফলক। এই উপন্যাসে অপুর শৈশব, তার গ্রামের জীবন, এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। পরে সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে তাঁর বিখ্যাত "অপু ট্রিলজি" চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়।
এরপর "অপরাজিত" উপন্যাসে অপুর জীবনযাত্রার নতুন দিক, তাঁর জীবনের ওঠাপড়া এবং শহরের সঙ্গে তাঁর মানসিক সংঘাত চিত্রিত হয়েছে। বিভূতিভূষণের আরেকটি অনবদ্য সৃষ্টি "আরণ্যক", যেখানে একটি অরণ্যের প্রকৃতি এবং মানবজীবনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসটি প্রকৃতির প্রতি বিভূতিভূষণের গভীর মমত্ববোধের প্রতিচ্ছবি।
রচনার বৈশিষ্ট্য:
বিভূতিভূষণের লেখায় অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রকৃতির জীবন্ত চিত্রায়ন। তিনি নিছক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই দেখাননি, বরং প্রকৃতিকে একটি জীবন্ত চরিত্র হিসেবে প্রতিস্থাপন করেছেন তাঁর লেখায়। তাঁর রচনায় গ্রামের জীবন এবং শহরের জীবনযাত্রার মধ্যে তফাৎও খুবই স্পষ্ট। তাঁর ভাষা সহজ, মমতায় ভরা, কিন্তু একইসঙ্গে গভীর জীবনবোধে পূর্ণ। মানব জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি, গ্রামীণ জীবনের সরলতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সহজাত সম্পর্ক তাঁর রচনাগুলির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি:
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জীবদ্দশায় সেভাবে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার পাননি, তবে তাঁর লেখা "পথের পাঁচালী" এবং অন্যান্য রচনা বাংলা সাহিত্যের মণিকোঠায় স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছে। মৃত্যুর পর তাঁর সাহিত্যিক কীর্তি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে, এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মৃত্যু:
১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। তবে তাঁর সাহিত্যকীর্তি আজও অমর এবং বাঙালির হৃদয়ে চিরজাগরুক। তাঁর রচনাগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
অত্যন্ত প্রিয় লেখক যার লেখনীর মধ্য দিয়ে জীবন ও প্রকৃতির অদ্ভুত বন্ধন আজও পদে পদে অনুভব করি। আপনার লেখাটি পড়ে ছোটবেলাকার বিভূতিভূষণ সম্পর্কে রচনা লেখার স্মৃতি মনে পড়লো। খুবই ভালো লিখেছেন। ইনফ্যাক্ট আপনার এখনকার প্রতিটা ব্লগই আমার খুব ভালো লেগে পড়তে।
অনেক উৎসাহ পেলাম আপনার মন্তব্য পড়ে।
আমি আমার জীবনে বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বেশ কিছু কবিতা ও গল্প পড়েছি। তার লেখা কবিতা এবং গল্প গুলো পড়লে অনেক বেশি ভালো লাগে আমার। আপনি দেখছি জন্মদিনে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩০ তম জন্মদিন উপলক্ষে তার বিস্তারিত তথ্য আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। বেশ ভালো লাগলো তার সাথে আরো একবার পরিচিত হতে পেরে।
বরাবরের মতো আজকেও দারুণ একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন বৌদি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস এবং ছোট গল্পের জন্য ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলেন। আপনি উনার সম্পর্কে দারুণ লিখেছেন বৌদি। পোস্টটি পড়ে আসলেই খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখক জীবদ্দশায় পুরস্কার পায়নি তো কি হয়েছে, তবে দিদিভাই, আমি মনেকরি কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।
বেশ ভালো লাগলো পুরো লেখাটি, বলতে গেলে তথ্যবহুল লেখা।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার অনেক পছন্দের একজন লেখক। গতকাল আমিও উনার জন্মদিন উপলক্ষে একটা পোস্ট করেছিলাম। আপনার পোস্ট টা প ড়ে বেশ ভালো লাগল। নতুন কিছু তথ্য পেলাম পোস্ট টা হতে। সত্যি প্রকৃতি এবং গ্রামীণ জীবন নিয়ে উনার লেখার তুলনা হয় না।