"আমার বাংলা ব্লগ " প্রতিযোগীতা -১৪ "গ্রীষ্মকালীন ফলের কাচা আম চুরির গল্প"
Copyright free image source : Pixabay
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। প্রথমে ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।এই প্রতিযোগিতার কথা শুনে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমি ও কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম একদিন আমার ছেলেবেলার কিছু মজার ঘটনা শেয়ার করি। আজ সেই সুযোগ পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আপনারা সবাই জানেন আমি গ্রামের মেয়ে। আমি ছোটবেলা থেকে গ্রামে বড় হয়েছি। তবে আমার ছেলে বেলা একটু ভিন্ন ভাবে কেটেছে। আমার ছেলেবেলায় খেলার সাথীদের সংখ্যা খুবই কম ছিলো। বলতে গেলে আমি একা একা বড় হয়েছি। তাই আমার জীবনে ছেলেবেলায় মজার ঘটনা তেমন একটা নেই বললেই
চলে।তবে কলেজ জীবনে প্রচুর মজার ঘটনা আছে। তাই ভাবলাম সেই গুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আশা করি আমার এই গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
আমি টক জাতীয় ফল খেতে খুব ভালোবাসি। আর যদি চুরি করে খাওয়া যায় তবে তার আনন্দই আলাদা। প্রথমে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কাচা আম চুরি করার ঘটনা।
এই ঘটনাটি প্রায় ১৩ বছর আগের ঘটনা। আমি তখন মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিকে উঠেছি। আমি ক্লাস নাইনে থাকতে বাড়ি ছেড়ে একটা মেয়েদের মেসে চলে যাই। আর সেই থেকে আমি বাড়ি ছাড়া। তবে আমি যে মেসে থাকতাম সেই মেস থেকে আমাদের স্কুলে যেতে প্রায় ১০ মিনিটের মতো সময় লাগতো। আমাদের স্কুলের একটি আম গাছ ছিলো। সেই আম গাছে প্রতি বছর প্রচুর আম হতো। আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে স্কুলে গিয়ে গাছে আম দেখতাম আর ভাবতাম কি করে এই আম খাওয়া যায়। কারণ ওই গাছের আম পাকলে স্যার ম্যাডামরা সেই আম খেতো। কিন্তু আপনারাই বলুন তো আমাদের খেতে ইচ্ছা করে। আমি আম খেতে খুব পছন্দ করি। আর সে কাচা বা পাকা আম ই হোক। আমরা সংখ্যায় ৪ জন ছিলাম। বৈশাখ মাসের সময় বাইরে প্রচন্ড গরম এবং রৌদ্রের তাপ ও ছিলো খুব। ওই গাছের আম খাওয়ার খুব ইচ্ছা হলো। আর আমি কাচা আম লবণ দিয়ে খেতে খুব পছন্দ করি। এখনও বাড়ীতে কাচা আম আনলে আমার শাশুড়ী আমাকে এখনও মাখিয়ে দেয়। একদিন হটাৎ করেই মাথায় আসলো চুরি করার। শুনেছি চুরি করে খাওয়া নাকি অনেক মজার। আসলে আমি ছোট থাকতে কোনোদিন চুরি করে কোন কিছু খেতে পারিনি। আমার মা শুধু
আমাকে বলতো কখনও কার ও জিনিসে না বলে হাত দিবে না। না বলে হাত হাত দেওয়াকে বলে চুরি করা। আর একটা কথা মা বলতো কখনও মিথ্যা কথা বলবে না। মিথ্যা বলা পাপ। এই কথাগুলো শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। একদিনের ঘটনা বলি মিথ্যা কথা নিয়ে।এটা ক্লাশ থ্রীতে থাকার সময়ের ঘটনা। আমাদের অপর্ণা নাম করে একটি মেয়ে ছিলো। সে আমার থেকে অনেক বড়।তাই আমি তার সব কথা শুনে চলতাম। একদিন ও আমাকে বললো তুই তোর বাড়ি থেকে একটা নতুন জামা আনিস আর আমি ও আনবো।তারপর আমরা ওই জামা পরে স্কুল থেকে পালিয়ে ঘুরতে যাবো। আমি ও রাজি হয়ে গেলাম কারণ আমার বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাশ করতে মন চাইতো না। সবাই খেলতে বের হয়ে যেত আর আমার খেলতে যেতে ৫.৩০ টা বেজে যেত। স্কুল থেকে ফেরার পর মা আবার জোর করে হাতের কাজ করাতো তারপর খেলতে যেতে দিতো। তাই একদিন বুদ্ধি করে আমি স্কুল থেকে ৩ টা বাজতে বাজতে লুকিয়ে বের হয়ে খেলতে চলে গেলাম।আমি একা বেরিয়ে গেলাম ওই মেয়েটা বের হলো না। এই কথা মায়ের কানে যাওয়াতে মা তো রেগে গিয়ে জানতে চাইলে আমি মিথ্যা বললাম মার খাওয়ার ভয়ে। আমি মিথ্যা বলাতে মা রেগে গিয়ে আমাকে খুব মারলো। যে বাবা আমাকে কোনোদিন বকা দেয় নি।আমাকে মারেনি পর্যন্ত। সেই বাবাও সে দিন আমাকে খুব বকে ছিলো। আজ ও সেই মার খাওয়ার কথা আমার মনে আছে। এখনও মিথ্যা বলতে গেলে সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায়। সেই দিন থেকে আমি আর কোনোদিন চুরি ও মিথ্যা বলিনি।
যাই হোক আসল কথায় ফিরে আছি। আমি প্ল্যান করলাম চুরি করে খাওয়ার। কারণ কখনও চুরি করার আনন্দ কেমন হয় জানতাম না। তাই ভাবলাম একদিন চুরি করবো। তাই আমি আমার এক বান্ধবীকে বললাম রবিবার ছুটির দিনে আমরা চুরি করবো। ঠিক যখন বাইরে লোকজন বেশি থাকে না। ঠিক দুপুরে আমরা আম পারবো। কিন্তু কে গাছে উঠবে। ঠিক হলো আমি গাছে উঠবো। কিন্তু সমস্যা একটাই আমি গাছে উঠতে পারি কিন্তু নামতে পারি না। কিন্তু এ দিকে আমি ছাড়া আমার আর কোন বান্ধবী গাছে উঠতে পারেনা।
এবার রবিবার দেখে ঠিক দুপুর ২ টার দিকে আমরা মেস থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে আমরা ওই গাছের নিচে গিয়ে বললাম তোরা ভালো করে দেখিস কেউ যেনো না আছে। আর কেউ আসলে আমাকে বলিস। এই বলে আমি গাছে উঠলাম আর ওরা তিন জন পাহারা দিতে লাগলো। আসলে আম গাছ খুব বেশি বড় ছিলো না। তাই গাছে উঠতে পারছিলাম। আমি প্রায় অনেক গুলো আম পারছিলাম। এবার তো গাছ থেকে নামার পালা। কিন্তু আমি তো নামতে পারিনা। এখন চিন্তা শুধু একটাই আমি কি করে গাছ থেকে নামবো। আমার এক বান্ধবী বললো লাফ দে। ওর কথা শুনে আমি গাছ থেকে লাফ দিতেই আমার জামা গাছের ডালে বেধে ছিঁড়ে গেলো। আর আমার পা কেটে গেল। তারপরও এটা ভেবে ভালো লাগলো চুরি তো করতে পেরেছি। এবার ওই আম নিয়ে আমরা তাড়াতাড়ি আমাদের রুমে লুকিয়ে রাখলাম। আর যখন অন্য মেয়েরা না থাকতো তখন সেই আম গুলো কেটে কেটে খেতাম অনেক মজা লাগতো আম গুলো খেতে। আসলে চুরির ফল মিষ্টি লাগে। এরপর থেকে মাঝে মাঝে একটু চুরি করতাম। আসলে সেই থেকে বুঝতে পারলাম চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা।আর কথায় আসে না " আর চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পর ধরা"। কিন্তু আমি এসব কথা কাউকে কোনদিন বলিনি। আমার মা কে ও কোনোদিন বলিনি শুধু সেই মার খাওয়ার ভয়ে। আমার এখনও ভয় পাই সেই মার খাওয়ার। এখনও মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছা করে সেই সময়ের মতো আবার ও চুরি করে আম, বড়ই পাড়ার । কিন্তু আর হয়ে ওঠে না। আমি ছেলে বেলায় চুরি করতে না পারলে ও বড় হয়ে তো পারছি। এরপর আবারও কয়েকজন বান্ধবী মিলে মাঝে মাঝে চুরি করতাম। এই চুরি করা ছিলো সবাই মিলে আনন্দ করার জন্য। আসলে এই একটা সব কিছু তুলে ধরা সম্বব নয়। আমি পরবর্তীতে আমার জীবনের অনেক গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার। আজ সংক্ষিপ্ত করে আমার জীবনের প্রথম চুরি করার সেরা গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আপনাদের ভালো লাগবে আমার এই গল্পটি। আগামী দিন নতুন কোন বিষয় নিয়ে আবার আসবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।
হা হা হা শান্তনার বানী হলো আপনি চুরি করার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে সফল হয়েছেন। সত্যি কিছু বিষয়ে অন্যায় করেও মজা পাওয়া যায়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ধন্যবাদ আপনার গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
বৌদি আপনি ঠিকই বলেছেন, চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে সে ধরা। এই কথাটা কিন্তু আমার পোস্টেও লিখেছিলাম গত পরশু। তবে আপনার মিথ্যা কথা বলা এবং চোরের গল্প দুটোই বেশ মজার ছিল। ঠিকই বলেছেন বৌদি মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে সেই সোনালী অতীতে ফিরে যেতে কিন্তু সেটা কি সম্ভব। আমাদের সাথে আপনার এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য, আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
তবে বৌদি একটু সাবধানে থাকবেন, যদি কাকিমা শুনে আপনার চুরির গল্প পাস হয়ে গেছে, তাহলে আবারো মার দিতে পারে,হাহাহা। আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন
বৌদি আপনার আম চুরি গল্প শুনে সত্যি আমি অবাক হয়ে গেছি। আপনি গাছে উঠতে পারেন সত্যিই আপনার গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনার বান্ধবীরা পাহারা দিয়েছে এবং আপনি গাছে উঠেছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় আপনি গাছ থেকে নামতে পারছিলেন না। বান্ধবীর কথা শুনে লাফ দিয়ে জামা ছিড়ে ফেলেছেন এবং পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছেন। তবে আম চুরি করতে পেরেছেন। বিষয়টি ভালো লাগলো এবং লুকিয়ে লুকিয়ে আম খেয়েছেন।আপনার গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। শুভকামনা রইল আপনার।
বৌদি এটি মজার কথা ছিল।আসলে আমি যতদূর জানি গাছে ওঠা কঠিন ,কিন্তু গাছ বেয়ে সরসর করে নামাটা খুব সহজ।আপনার আম চুরির মজার ঘটনা পড়ে ভালো লাগলো।অনেক সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে বৌদি।
ছোট বেলার এই দিনগুলো কতই না মধুর ছিলো। আপনার গল্পটি পড়ে বেশ মজা পেলাম বৌদি। গল্পটি বেশ গুছিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ বৌদি। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
বৌদি আপনার ছোটবেলার গল্প শুনে ভালো লাগলো আবার আপনি মার খেয়েছেন শুনে অনেক কান্নাও আসলো😂।তবে বৌদি আপনি মিথ্যা বলার জন্য মার খেয়েছেন বলেই হয়তো আপনার জীবনে অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে। সত্যি বলতে বাবা-মা আমাদের ভালোর জন্যই অনেক সময় বকাঝকা করেন কিন্তু সেই কথা যারা বুঝতে পারে তারাই জীবনে উন্নতি করতে পারে।যাই হোক আপনার ছোটবেলার গল্প শুনে অনেক মজা পেলাম। এই দিন গুলো আমাদের জীবনে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। বৌদি আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
বৌদি আপনার জীবনের প্রথম চুরির অভিজ্ঞতাটি শুনে বেশ ভালই লাগলো। আমার মনে হয় শুধু চুরির অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই আপনি আম খাবার পরিকল্পনা করেছিলেন। যার জন্য জামা ছিড়ে গেল পায়ে ব্যাথা পেলেন তাতেই বা কি। শেষ পর্যন্ত কাজটিতে সফল হলেন হাহাহা। কতইনা মজার ছিল এসব অভিজ্ঞতা।
ওরে বাবা তুমি কত কি করেছো গো বৌদি! আর আমার মাথায় হাত পরে যাচ্ছে এটা ভেবে যে তুমি গাছেও উঠতে পারতে! গাছ থেকে নামার সময় ওভাবে পরে যে হাত পা ভাঙ্গেনি এই বড় কথা। খুব মজা পেলাম সত্যি 😊। বেশ দুষ্টু ছিলে 🤪
প্রত্যেকের শৈশবে কিছু না কিছু এরকম আশ্চর্যজনক ঘটনা থাকে। অনেকেই অনেক ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে এই শৈশবে ।আপনার ঘটনাটি পড়ে বেশ ভালই লেগেছে বউদি। শৈশবে আনন্দ ফুর্তি করতে গিয়ে কতো মার খেয়েছি হিসাব নেই ।বউদি সুন্দর ছিল আপনার শৈশবের সেরা ঘটনাটি ।ধন্যবাদ ।
এমন সময় জীবনে যদি বারবার আসতো, তাহলে মনে হয় বেশ ভাল হতো। হয়তো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আপনার ফেলে আসা অতীত জীবনের মিষ্টি মধুর গল্প শুনতে পারলাম । আসলেই কাঁচা আম গুলো লবণ-মরিচ দিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগে । আপনার ছোটবেলার বান্ধবীর সঙ্গে কার ঘটনাটা বেশ মজা লেগেছে। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য ।