নববর্ষের মেলা

in আমার বাংলা ব্লগ10 days ago
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।

আজকে আপনাদের সাথে মেলার কিছু আলোকচিত্র শেয়ার করবো। এই বছর আসলে আমার এইটা প্রথম মেলায় যাওয়া। এখন আগের মতো তা ইচ্ছা করে না যেতে। এই মেলাটা তবে অনেক ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। নববর্ষের মেলাটা আসলে আমাদের এখানে হয় না, এইটা গ্রামের দিকে হচ্ছিলো, এক বন্ধুর কাছ থেকে খোঁজ পেলাম। আর আমাদের এখান থেকে অনেকটা দূর, প্রথমে ভেবেছিলাম যাবো না, কিন্তু পরে রাতে মানে ৭ টা কি সাড়ে ৭ টা এইরকম সময় হঠাৎ ইচ্ছা হলো না যাই দেখি। গরমে তো এমনিতেই আর ভালো লাগছে না বাড়িতে, তার থেকে ঘুরে আসি। এরপর বাইকটা বের করে ছুটলাম সেই উদ্দেশ্যে, বাইকে প্রায় দেড় ঘন্টার পথ আর রাস্তায় জ্যাম তো আছেই। যাইহোক, এই মেলাটা গোবরডাঙ্গা নামের একটি গ্রামের দিকে হয় প্রতি বছর আর এইবার নিয়ে ২০২ তম বর্ষে অতিক্রম করেছে এই মেলাটা। এইজন্য এই মেলাটা অনেক ঐতিহ্যবাহী। আমি আগে এই মেলায় যাইনি কখনো, এইবার প্রথম গিয়েছিলাম। মেলাটা তেমন বড়ো না আবার ছোটও না , মোটামুটি মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে আর কি।

Photo by @winkles

Photo by @winkles

যাইহোক, প্রথমে বাইকটা পার্কিং করে মেলার ভিতরে চলে গিয়েছিলাম। আর প্রথমেই সবার চোখে যেটা পড়ে সেটা হলো এই নাগরদোলা। এইটা অনেকটা উচ্চতাসম্পন্ন আর বড়োও অনেক। এখনকার নাগরদোলাগুলো মোটরের মাধ্যমে ঘুরায়, কিন্তু আগের নাগরদোলাগুলো হাত দিয়ে দিয়ে ঘুরিয়ে দিতো কয়েকজন মিলে। আমি নাগরদোলায় সত্যি বলতে একবারই উঠেছিলাম, আর ওটাই শেষ ওঠা, আমার ভয় করে উপরের থেকে যখন ঘুরলি দিয়ে নামে, মনে হয় আমি যেন শূন্যে উড়ছি হা হা। এইটা আসলে অনেকবার উঠলে আর হয় না, কিন্তু প্রথম প্রথম যারা ওঠে, তাদের বমি, মাথা ঘুরানো এইসব নানাবিধ হয়।

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

এরপরে হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম বেলুন ফাটানোর জায়গায়। মানে এখানে বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটাতে পারলে পুরস্কার আছে। তবে এখানে একটা লিমিট এর বিষয় আছে, মানে পুরস্কারটা আছে যে কয়টা ফাটাতে পারছে আর কি। আমি ভাবছিলাম খেলবো, কিন্তু আমার কপালে এইসব বাধে না একদমই, তাই আর ফাও টাকা খরচ করে খেলিনি। তবে এইগুলো খেলার মাধ্যমে একটা আলাদা মজা আছে। যাইহোক, এরপর দেখলাম যে মেলায় বিভিন্ন ধরণের বাচ্চাদের খেলনা আর আর্টিফিশিয়াল ফুল ঝুলিয়ে রেখেছে। যদিও মেলায় আজকাল বাচ্চাদের আর মেয়েদের জিনিষপত্রই বেশি ওঠে, ছেলেদের জিনিস নেই বেশি হা হা । যেখানেই যাওয়া হবে সেখানেই কানের দুল, সোনা আর কসমেটিকস হা হা।

Photo by @winkles

Photo by @winkles

এরপর দেখলাম একজন বরফ গোলা বিক্রি করছে। যেদিন গেছিলাম সেদিন আবার গরমও পড়েছিল খুব, ভাবলাম গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, বরফ গোলা খেয়ে নেই একটা তাহলে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগবে। বরফ গোলা এটা আবার একটু স্পেশিয়াল বলা যায়, কারণ এটা আমাদের লোকাল কলকাতার না, গুজরাটের। লিখে তো রেখেছে গুজরাটের, কিন্তু আসলেই গুজরাট না কোন রাটের ঠিক নেই হা হা। আমি এই বরফ গোলা আবার তেমন একটা খাইনা, কারণ গলায় ঠান্ডা বসে যাওয়ার সমস্যা থেকে যায়। আমি স্ট্রবেরি আর কাঁচা আমের ফ্লেভারটা নিয়েছিলাম, কিন্তু স্ট্রবেরির সাথে কাঁচা আম তেমন একটা ভালো লাগেনি। যাইহোক, খেয়ে খেয়ে সব অভিজ্ঞতা বাড়ানো ভালো একবার করে।

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

এরপর হাঁটতে হাঁটতে মেলার শেষ প্রান্তের দিকে চলে গিয়েছিলাম। এখানে হাতের তৈরি নানাধরণের জিনিসপত্র দেখেছিলাম। যেমন ঝুড়ি, কুলা, টুপি ইত্যাদি নানা জিনিস। এইগুলো সবই কিন্তু তাদের নিজেদেরই হাতের তৈরি আর ওখানেই বসে বসে তৈরি করে বিক্রি করছে অনেকেই। এইগুলো কিন্তু আসলে সব মেলায় দেখা যায় না, আমি অনেকদিন বাদে এই মেলায় এইগুলো দেখলাম, নতুনত্ব কিছু মনে হয়েছিল আমার কাছে এইগুলো। এইরকম নানা ডিজাইনের জিনিস উঠেছে এই মেলায়, কেনার থেকে যেভাবে সাজিয়েছে তাতেই যেন মনটা ভরে যাওয়ার মতো। তবে এইগুলো নিজেদের হাতে তৈরি করা, ফলে একটু দাম আছে বটে এইগুলোর।

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

Photo by @winkles

এইবার চলে গিয়েছিলাম খানাপিনার জায়গায়। ঘুগনি খেয়েছিলাম, মেলায় ঘুগনি খেতে বেশ ভালোই লাগে গরম গরম। এরপর মোমোর জায়গায় গিয়েছিলাম, দেখলাম সব পাহাড়ি, রাজস্থানি লিখে রেখেছে। দেখে ভাবলাম একটু টেস্ট করি কি জিনিস দেখি। সব নাম আলাদা আলাদা দিয়ে রাখে ঠিকই, কিন্তু খেয়ে আমার কাছে সব একই মনে হয় হা হা। যাইহোক, এরপর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে করতে দেখলাম যে, মাটির তৈরি অনেক ধরণের নকশা এনেছে। এইগুলোর ডিজাইন অনেক সুন্দর ছিল দেখতে, পুতুলের ডিজাইন আছে, মুখোশের ডিজাইন আছে। তারপর প্রতিমার ডিজাইন ইত্যাদি এইরকম নানান ডিজাইন আছে, যদিও এইগুলো সাঁচের মাধ্যমে তৈরি।

Photo by @winkles

Photo by @winkles

এরপর দেখে শেষ করে দিয়েছিলাম আর বাড়ি যাওয়ার পথে ভেবেছিলাম কিছু খেয়েই যাই একবারে। কিন্তু ওর ভিতরে দাম শুনে আর মনে হলো না বসি। গলা কাটা দাম যারে বলে। একটা লিমিট আছে, কিন্তু দাম শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। খেলামই না, কারণ একে তো খোলা জায়গায় আর তারপর ওই দাম, ইচ্ছাই হয় না আর। এরপর বাড়ির জন্য কিছু খাবার কিনে নিয়েছিলাম। এই ছিল মোটামুটি মেলায় ঘোরাঘুরি করার কিছু বিষয়।


শুভেচ্ছান্তে, @winkles

ক্যামেরাস্যামসুং গ্যালাক্সি M33 5G
লোকেশনগোবরডাঙ্গা
তারিখ২০.০৪.২০২৪


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 days ago 

বাইকযোগে আপনি নববর্ষের মেলায় উপস্থিত হয়েছেন এবং সেখান থেকে বেশ সুন্দর সুন্দর চিত্র ধারণ করেছেন। বেশি ভালো লাগলো নববর্ষের এই মেলা থেকে আপনি খুব সুন্দর চিত্রধারণের পাশাপাশি বর্ণনার সাথে সেই অনুভূতি শেয়ার করেছেন দেখে।

 10 days ago 

আপনি মেলার খুবই সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।তবে দাদা আপনার দম আছে অনেক। কারণ একটানা দেড় ঘন্টা এই গরমের মধ্যে বাইক চালিয়েও আপনি সুস্থ ছিলেন। যাই হোক ২০২ তম বৎসর অতিবাহিত করেছে, এত ঐতিহ্যবাহী মেলায় ঘোরার স্বাদ সবার হয় না। নাগরদোলাটা দেখতেও অনেক বড় ছিল। আপনি ঠিক বলেছেন দাদা এই নাগরদোলা যখন উপর থেকে নিচে নামে তখন অনেক ভয় লাগে। আপনার মত আমারও অনেক ভয় লাগতো তবে যখন আমি ট্রেনিং করে চার হাজার ফিট উপরে বিমান থেকে জাম করেছিলাম এবং সফলভাবে মাটিতে নেমেছিলাম তারপর থেকে নাগর দোলায় উঠলে আর ভয় লাগতো না। আপনার এই কথাটাও সত্যি এখন মেলা মানেই মেয়ে আর ছোট বাচ্চাদের সামগ্রীর মেলা। আমাদের পুরুষদের একমাত্র মানিব্যাগ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। টাকা বড় কথা না আপনি মেলার ভিতরে ধুলাযুক্ত খাবার খাননি এটাই বড় কথা। মেলার খাবারগুলো খোলা থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ধুলাবালি যুক্ত থাকে। যাই হোক দাদা আপনার পোস্টটা পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো এবং ছোটবেলার মেলার কথা মনে পড়ল। আপনি এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।

 10 days ago (edited)

দাদা গোবরডাঙ্গা গ্রামের মেলা তো দেখছি বেশ ঐতিহ্যবাহী। মেলায় ঘুরাঘুরি করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তাই আশেপাশে মেলা হলে মিস করি না। যাইহোক নাগরদোলায় চড়তে আমার খুব ভালো লাগে। কয়েক মাস আগেও নাগরদোলায় চড়েছিলাম। তবে সেই নাগরদোলা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আপনি যদি কয়েকবার নাগরদোলায় উঠেন, তাহলে পরবর্তীতে অনেক ভালো লাগবে। বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটাতে ভীষণ ভালো লাগে আমার। আগে বন্দুক দিয়ে ১০ বারের মধ্যে ৮/৯ বার বেলুন ফাটাতে পারতাম। হাতের তৈরি কুলা এবং ঝুড়ি অনেক দিন পর দেখে খুব ভালো লাগলো। আসলেই দাদা মেলায় ছেলেদের তেমন কোনো জিনিসপত্র দেখা যায় না। মেলায় ঘুরাঘুরি করে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন দাদা। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 10 days ago 

২০২ বর্ষের পদাপন করলো মানে বেশ ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। এ ধরনের মেলা গুলো বেশ সুন্দর হয় যদিও সাইজে বেশি বড় না মেলার আকার। আপনি তো শেষমেশ মেলাতে ঘুরতে গেলেন। আর নাগরদোলার কথা কি বলব দাদা। আমি তো ছোটবেলায় অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করে কান্না শুরু করে দিয়েছিলাম নাগরদোলায় উঠে। সেই শেষ ওটা আমি আর কখনো মেলাতে গেলে নাগরদোলায় চড়ি নাই। কিন্তু কিছুদিন আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটন মেলায় যেয়ে নাগর দোলায় উঠতে হলো আবারও বাধ্য হয়ে। যেহেতু আমার সাথে মেয়েরা ছিল কিন্তু ওদের বাবা ছিল না একটি জরুরী কাজে গেছিল তাই। না হয় মেয়েদের সাথে ওদের বাবা থাকে সব সময়। নাগরদোলায় উঠে আমার বেহাল অবস্থা। আমি কোনরকম ওড়না দিয়ে আমার চোখ দুটো প্যাঁচায় রাখছিলাম। না হয় আমার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যেত হি হি হি। অনেক ভালো লাগলো আপনার মেলায় ঘোরাঘুরির মুহূর্তটি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।

 9 days ago 

দাদা, আমারও নাগরদোলায় চড়তে বেশ ভয় হয়। তবে বেলুন ফাটানোর দোকানটা দেখে বেশ ভালো লাগলো, আগে যখন আমাদের এদিকে মেলা বসতো তখন প্রায়ই এই খেলাটা খেলতাম। বেশ মজা লাগতো নিজের কাছে। তবে দুঃখের বিষয় এখন তো আমাদের এদিকে আর মেলাই বসে না। আপনি যে গোবরডাঙ্গার মেলায় বেশ দারুণ সময় কাটিয়েছেন, তা কিন্তু আপনার ছবিগুলো দেখেই বুঝতে পারছি। শুভেচ্ছা রইল।

 9 days ago 

দাদা মেলায় যাবেন না বলে ও আবার গেলেন ৭ টা থেকে ৭.৩০ টার দিকে।বাইকে করে গেলেন তাও দেড় ঘন্টার পথ।তবে তো একটু দূরই।আমার কিন্তু নাগরদোলায় চড়তে ভীষণ ভালো লাগে। আপনি মেলার বেশকিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করলেন। যা দেখে মেলার বেশকিছু চিত্র দেখা হয়ে গেলো।বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষন মাটির নানান জিনিস।আমার ভীষণ পছন্দ। এ ধরনের মেলাগুলোতে খাবারের নানান ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে অনেক দাম ধরে বিক্রি করে এসব খাবার।এসব না খাওয়াই ভালো এই গরমে।ঘুরে ঘুরে মেলার সব স্টল দেখলেন আর আমাদের সাথে তা শেয়ার করেছেন। খুব ভালো লেগেছে দাদা।ধন্যবাদ জানাই আপনাকে চমৎকার ভাবে বৈশাখী মেলার চিত্র তুলে ধরার জন্য।ভালো থাকবেন সব সময়।অনেক অভিনন্দন রইলো আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64307.66
ETH 3146.33
USDT 1.00
SBD 3.88