বর্ষার দিনে গ্রামের হাটে ভয়ঙ্কর এক ঘটনা প্রতক্ষ্য করাsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

child-817373_1920.jpg
Copyright Free Image Source : PixaBay


ছোটবেলার কথা সবারই অল্প বিস্তর মনে থাকে । আসলে ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার মুহূর্তের মধ্যে ঠিক কোনগুলো মনে থাকবে আর কোনগুলো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে সেটা একেবারেই বোঝা যায় না । অনেক সময় খুবই তুচ্ছ কোনো ঘটনা বহুদিন বাদেও স্মৃতির পাতায় জ্বল জ্বল করে, কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনাই আর মনেই পড়ে না কখনো ।

আমার ছেলেবেলার অনেক ঘটনাই মনে আছে, কিন্তু অধিকাংশই হারিয়ে ফেলেছি বিস্মৃতির গর্ভে। আজকে আমাদের এখানে সকাল থেকে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে । এমনই এক বর্ষার দিনে ছোটবেলায় বাবার সাথে আমাদের গ্রামের এক হাটে গিয়ে এক ভয়ানক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম । ধাঁ করে সেই ঘটনাটি হঠাৎই মনে পড়ে গেলো । ভাবলুম আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমার ছোটবেলার সেই ঘটনাটি ।

এর আগে আমার একটি পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম যে আমার ছোটবেলাটা যেহেতু গ্রামে কেটেছে তাই গ্রামের হাটে-বাজারে অনেক গিয়েছি । বাবার সাথেই মেইনলি হাটে যেতাম, তবে দাদুর সাথেও গিয়েছি অনেকবার । আমাদের গ্রাম ছিল একদম অজ পাড়াগাঁ যাকে বলে । সপ্তাহে রবি আর বৃহস্পতিবার হাট বসতো আমাদের গ্রামে ।

বাবা আমাকে নিয়ে প্রায় কোনোদিনই হাটে যেতে চাইতো না । খুব বিরক্ত করি এ জন্য । কিন্তু, শেষমেশ আমার জেদের কারণে নিয়ে যেতে বাধ্য হতো । এমনকি বর্ষাকালেও হাটে যেতাম বাবার সাথে । তো এমনই এক বৃষ্টিমুখর দিনে ছিল হাটবার । দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি হঠাৎ করেই থেমে গিয়ে রাঙা রোদ উঠলো । আমিও হাটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ।

বাবা সেদিনও আমাকে যথারীতি বৃষ্টি, রাস্তার কাদা আর আছাড় খাওয়ার ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করতে চাইলো । কিন্তু, সেসব শোনার পাত্র আমি ছিলাম না । তাই হাফ প্যান্ট আর হাফ শার্ট পরে খালি পায়ে রেডি হয়ে গেলুম হাটে যাওয়ার জন্য । অগত্যা আর কি করার, বাবাও ছাতা দিয়ে আমাকে যথাসাধ্য ঢেকেঢুকে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়, হাটের অভিমুখে ।

বর্ষার শুরু । তাই রাস্তায় তখন খুব বেশি কাদা জমেনি । প্যাচপ্যাচে সেই কাদা মাড়িয়ে আমরা চললুম দু'জনে হাটে । হাটে যাওয়ার আমার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল নানান ধরণের খাবার খাওয়া । বিশেষ করে আমড়া মাখা আর বুট মাখা । তো হাটে পৌঁছাতেই দেখা গেলো বৃষ্টির কারণে সেদিন অর্ধেকও দোকান আসেনি । তবে, আমার প্রিয় আমড়াওয়ালা আর চানা-বুট-ছোলা-ঘুগনী ওয়ালা হাজির ।

আর এসেছে প্রচুর আখ ও বাতাবি লেবু । বাবা যথারীতি ব্যস্ত হয়ে পড়লো বাজার করতে । আমিও পিছু পিছু আমড়া চাটতে চাটতে বাজার করা দেখতে লাগলুম । আমার মুখ এক মুহূর্তও বিরাম নেই । আমড়া শেষ হলে বুট, বুট শেষ হলে ছোলা, ছোলা শেষ হলে ঘুগনি, এরপরে গজা, বাতাসা, মুড়কি এসব ।

একসময় বাবার বাজার করা শেষ হলো । ঠিক সেই মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে বর্ষা নামলো আবার । বাবা আমার মাথায় ছাতা ধরে হাটের পাশে একটা চালাঘরে নিয়ে এলো । এই চালাঘরটি ছিল একজন তেলের কারবারির । হাটের পাশেই ছোট্ট একটি খাল । এই খালের নাম হলো হাটখোলার খাল । তো এই হাটখোলা খাল দিয়ে গ্রামের মুদি দোকানদার থেকে মহাজনদের নৌকো আসতো হরেক মাল বোঝাই করে শহর থেকে ।

এই খালের দুই পাড় ছিল খুব প্রশস্ত । এক পাড়ে হাট বসতো আর অন্য পাড় থাকতো উন্মুক্ত । শীতের দিনে সেই পাড়ে ধানের বোঝা নামাতো চাষীরা । তো সেবার বর্ষার কিছুটা আগে আগে এক পাল বেদেরা এসে সেই খোলা প্রান্তরে ডেরা বাঁধলো । ভয়েতে আমরা ছোটরা কোনোদিনও সেই বেদেদের ডেরার আশেপাশেও যাইনি । শুধু দূর থেকে দেখতাম কালো কালো মাথার চুলে জট বাঁধা পিঙ্গলবর্ণ এক গাদা ছেলেপিলে ও মেয়েরা হুটোপুটি করতো । বর্ষা বেশি পড়লেই সব হয় ঢুকে যেতো তাদের তাঁবুতে আর না হয় তাদের নৌকোতে । কম করে হলেও আট-দশটা নৌকো ছিল বেদেদের । এই বেদেদের কাছে সত্যি সত্যিই কিন্তু সাপ ছিল । কারণ, আমাদের বাড়িতেই এসেছিলো দেখাতে এরা - সাপ খেলা ।

তো সেদিন চালাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খালের অপর পাড়ের অস্থায়ী বেদে বস্তির দিকে চেয়ে ছিলাম । দেখি কি সেই বৃষ্টির ভিতরই বেদেদের একটি বছর আটকের বাচ্চা মেয়ে, কোলে আবার একটা ছোট বাচ্চা নিয়ে খালের যেখানে বাঁশের সাঁকো ছিল সেই বাঁশের সাঁকোর একপ্রান্তে এসে দাঁড়ালো । বলতে ভুলে গিয়েছি এই খালের ওপর তখনও কোনো ব্রিজ হয়নি, জাস্ট একটা বাঁশের সাঁকো ছিল পারাপারের জন্য ।

সেই বেদে মেয়েটি বাচ্চা কোলে নিয়েই বাঁশের সাঁকো বেয়ে কিছুটা উঠলো । সেই বৃষ্টির মধ্যে কাদা মাখা পায়ে বাঁশের সাঁকো পার হওয়া যে কি ভীষণ রিস্কি তা আমিও সেই বাচ্চা বয়সেও সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম । আর খালের ওপরের বাঁশের পুল গুলো ধনুকের মতো পিঠ উঁচু হয়ে থাকে, কেননা তলা দিয়ে যাতে পালতোলা নৌকোর যেতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য।

জীবনযুদ্ধে অবিরত সংগ্রাম করা সেই বেদেদের মেয়েটি প্রায় সাঁকোর মাঝামাঝি চলে এলো । দমবন্ধ করে আমি সেই দৃশ্যটি দেখছি । আমার নিজেরই বুক দুরু দুরু করছে । অনেকটা উঁচুতে দাঁড়িয়ে এখন মেয়েটি । প্রায় দো'তলা বিল্ডিং এর সমান উচ্চতা । আসলে একটা বাচ্চা মেয়ের বৃষ্টির মধ্যে কাদা পায়ে এতটা দূর আসাই একদম অসম্ভব, তায় তার কোলে আবার একটি বাচ্চা । কিন্তু, ভুলে গেলে চলবে না, ওরা বেদে ।

এরপরেই কিন্তু ঘটে গেলো সেই ভীষণ ঘটনাটি । হঠাৎ করেই বাচ্চা মেয়েটি সাঁকো থেকে ছিটকে নিচে পড়লো । কোলের বাচ্চাটিও হাত থেকে ছিটকে পড়েছে । একটা হৈ হৈ রব উঠলো হাটের মধ্যে । বাচ্চা মেয়েটির মাথার একটি পাশ খালের তুলতুলে নরম পলিমাটির মধ্যে নিমেষে সেঁধিয়ে গেলো । তবে, কোলের বাচ্চাটি একটু দূরে কাদার ওপরে চিৎ হয়ে পড়েছে ।ভাগ্যিস সেদিন সেই সময়ে ভাটা চলছিল । ভাটার কারণে তারা পড়লো শুধুমাত্র পলিমাটির কাদার মধ্যে । না হলে দুজনেরই মৃত্যু অবধারিত ছিল ।

হাটে একটু হৈ হৈ উঠেই আবার সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । না কেউ সেদিন বাচ্চা মেয়েটিকে সাহায্য করতে ছুটে যায়নি, কেউ আহা উহুও করেনি । এমনকি আমার বাবাও উদাস ভাবে তাকিয়ে ছিল । শুধু আমি কয়েকবার বাবাকে বলেছিলাম ওদেরকে কাদা থেকে টেনে তুলতে । শুনে বাবা হেসেছিলো । বলেছিলো ওরা বেদেদের ছেলে মেয়ে । তারাই এসে তুলবে ওদের ।

মনে আছে একটা পৃথিবী যেনো দুলে উঠেছিলো আমার সামনে সেদিন । তার মানে কি বেদেরা আমাদের মতো মানুষ নয় ? ওরা কি জন্তু জানোয়ার এর মতোই ? না এ প্রশ্নের জবাব আমি পেয়েছিলাম শুধু ধমকে । আমি চেয়ে দেখেছিলাম অনেকক্ষন মেয়েটি ও বাচ্চাটি সেই কাদার পরেই পড়েছিল । তথাকথিত ভদ্র সমাজের এক দঙ্গল মানুষের চোখের সামনে সে যেনো বিস্ময়মাখা চোখে ব্যঙ্গ করে চলেছিল ।

এই ঘটনাটি আমি কখনো ভুলতে পারিনি । সেই সময়টা আমাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছিল এই ঘটনাটি । রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার উঠে বসতাম দুঃস্বপ্ন দেখে । বড় হয়েও কোনোদিনও ভুলতে পারলাম না । সেই বেদে মেয়েটির আসহায়ভঙ্গিতে ভদ্র সমাজের এক হাট মানুষের সামনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা, বাবার সেই কথাটি "ওরা বেদে, আমরা কেনো তুলবো ওদের" - এসব ভুলতে পারি না । একটা চাপা বেদনা, একটা কষ্ট আজও ব্যথিত করে তোলে আমার হৃদয় ।

"এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই ...
মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই ...
এই মানুষের ভীড়ে আমার সেই মানুষটা নাই।"


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)


তারিখ : ০৩ মে ২০২৩

টাস্ক ২৫৪ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : bc02ad9cbe661f05304b5aaa8096970d1d7eb56b26797dea5ea1cddd3c1b0728

টাস্ক ২৫৪ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

দাদা আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে কিছুটা সময় যেমন হাসিতে ফেটে পড়েছি , তেমনিভাবে কিছুটা কষ্ট পেয়েছি। আসলে মানুষের কাছে মানবতা নেই বললে চলে। তা বাজারে অসুস্থ হওয়া লোকটির অবস্থা দেখেই বোঝা যায়। হাসলাম এ কারণে যে আপনার মুখ তো আর বিরাম ছিল না। চলছে তো চলছে এজন্য ট্রেনের মতোই চলছে। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে আজ আমি কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ছেলেবেলা চলে গিয়েছিলাম।

 2 years ago 

খুবই কষ্ট লাগলো ব্যাপারটি জেনে। একজন মানুষ মরে যাচ্ছে আর আমরা জাত নিয়ে বসে আছি। তারা কি মানুষ না? একজন মানুষ বিপদে পড়লে কি কেউ জাত,ধর্ম নিয়ে বসে থাকে?

আপনার এই গল্পটি পড়ে আমারও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গিয়েছে, আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কারণ ছোটবেলায় আমিও আমার বাবার সাথে অনেক হাঁটে গিয়েছি। বাবা যখন হাটে যাওয়ার জন্য রেডি হত আমিও তার পিছু ধরতাম। খুব ভালো লাগতো বাবার সাথে হাঁটে যেতে। বাবা প্রায়ই আমাকে নিয়ে যেত হাঁটে। ছোটবেলায় বাবার সাথে অনেক হেঁটেছি সেই স্মৃতিগুলো এখন মনে পড়ছে।

 2 years ago 

প্রথমে পোস্টটি পড়ে মজা পাচ্ছিলাম। কারন আগে কোন এক পোস্টে পড়েছিলাম দাদা আপনার আমড়া কাগজ সহ চেটে খাওয়ার গল্প।আপনি খাওয়ার জন্য ই হাটে যেতেন।যাই হোক ওমন সাঁকো আমিও ভয় পেতাম।বিশেষ করে আমার নানু বাড়ি থেকে নানুর ভাইয়ার বাসায় যেতে সাঁকো পরতো।কি যে ভয় কাজ করতো আমার বলে বুঝাতে পারব না।আর বেদের মেয়েটি ছোট তার উপর আবার কোলে একজন।আমিতো ভেবেছিলাম পানিতে পরে গেছে।ছোট বাচ্চাটিকে আর পাওয়াই যাবে না।সত্যিই খুব কষ্টেরই ঘটনা দাদা।আপনি এতোদিনেও যখন ভুলে যাননি।তখন আকাশ কালো করে যখনই বৃষ্টি হবে আর আপনি একান্তে থাকবেন তখনই এই ঘটনাটি আপনার মনে আসবেই।ধন্যবাদ দাদা শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আসলেই দাদা আমাদের ছোটবেলার অনেক কথাই আমরা ভুলে যাই। তবে কিছু কিছু স্মৃতি সত্যিই ভুলা যায় না।

আমিও পিছু পিছু আমড়া চাটতে চাটতে বাজার করা দেখতে লাগলুম । আমার মুখ এক মুহূর্তও বিরাম নেই । আমড়া শেষ হলে বুট, বুট শেষ হলে ছোলা, ছোলা শেষ হলে ঘুগনি, এরপরে গজা, বাতাসা, মুড়কি এসব ।

আপনার এই কথা গুলো পড়ে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ। দাদা এতো কিছু খেয়ে আপনার মুখ ব্যাথা করেনি নাকি। আপনি ছোট থেকেই ভোজনরসিক ছিলেন। তবে শেষের দিকটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। মাত্র আট বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে, কোলে একটি শিশু নিয়ে এতো উচু সাঁকো থেকে পরে গেলো। কিন্তু কেউ সাহায্য করলো না কাঁদা থেকে উঠতে। এই ব্যাপারটা সত্যিই খারাপ লাগার মতো। তবে আপনি এতো ছোট থাকতে কতটা গভীরভাবে সেই ব্যাপারটা ভেবেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন সেটাই ভাবছি। আপনি আসলেই সহৃদয়বান একজন ব্যক্তি। আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।

please visit my post 🙂

 2 years ago 

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মানুষ।
আপনি ঠিক যেভাবে যেভাবে বলেছেন দাদা আমিও কল্পনাতে সেভাবে সেভাবে ভাবছি। আর মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে ঘটনাটা ঘটেছে। এতো নিখুঁত ও মনোযোগ দিয়ে আমি পড়েছি। এভাবে কল্পনা করার মূলত একটি কারণ হচ্ছে আমাদের হাটে সাথেই একটি খাল আছে ‌। আর সেভেবে চোখের সামনে সব ভাসছে। আসলেই পুরো ঘটনাটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।😞

এই বেদেদের ব্যাপারে আমি নিজেও দেখেছি যে গ্রামের মানুষের একটা অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। তাদেরকে আসলে সবসময়ই অবহেলার চোখে দেখা হয়। আমাদের গ্রামেও বছরের একটা সময় তারা আসতো এবং দুই তিন মাস তাবু গেড়ে মাঠের ভেতর থাকত। কিন্তু তাদেরকে এতটাই অবহেলা করা হতো যে কুকুর বিড়াল হয়ত তাদের থেকে অনেক বেশি ভালো। যদিও এই ব্যাপার গুলো এখনকার যুগে হয় কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে দাদা তোমার ঘটনাটা শুনে সত্যিই আমার কাছে অনেক বেশি কষ্ট লেগেছে। কারণ বেদের মেয়ে হয়েছে বলে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা যাবে না...! অন্তত বাচ্চাটার কথা চিন্তা করে হলেও তো সবার এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

 2 years ago 

অনেক খারাপ লাগলো বিষয়টি জানার পরে। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। কে কোন জাতের সেটা বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো আমরা সবাই মানুষ। যতদিন আমরা এটাকে বাস্তবে পরিণত করতে না পারবো ততদিন আমরা মানুষ হিসাবে গণ্য হতে পারব না। এত ছোট একটি বাচ্চাকে নিয়ে ছোট একটি মেয়ে পড়ে গেল আর কেউ তাকে সাহায্য করল না এটা খুবই একটি খারাপ বিষয়। তবে দাদা আমি এত কম বয়সে এতটা গভীরভাবে ভেবেছেন এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো। আসলে ভালো কিছু উপলব্ধি করার ক্ষমতা সবার থাকে না।

 2 years ago 

বেদে মেয়েটির কথা শুনে সত্যিই খারাপ লেগেছে। আসলে আমরা মানুষরা বড় অদ্ভুত। তারাও তো মানুষ। তারাও তো কারো না কারো আপনজন। ছোট্ট মেয়েটি আর তার কোলে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটি বেঁচে গেল কি মরে গেল এতে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। আসলে যার আপনজন কষ্ট পায় সে শুধু সেই কষ্ট বুঝতে পারে। আপনার লেখাগুলো পড়তে পড়তে দু চোখের কোনায় পানি চলে এসেছিল দাদা।

 2 years ago 

অসাধারণ লিখেছেন দাদা আসলে ছোট কালের অনেক স্মৃতি মনে আছে। সে বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া কিংবা হেঁটে হেঁটে বাজারে যাওয়ার দৃশ্য। অনেক সময় পার পিছলে পড়ে যাওয়া পুরা শরীরে কাদা মেখে আবার ফিরে আসা। আপনি তো হাটে যাইতেন শুধু খাওয়ার জন্যই আমড়া চাটতে চাটতে আবার গজা, ঘুগণী তো পুরো বাজার শেষ করে দিতেন মনে হয়? সত্যি বেদে মেয়েটির জন্য অনেক খারাপ লাগছিল। তখনকার সমাজের এমন বৈষম্যমূলক আচরণ খুব বেশি খারাপ লাগতো নিজের চোখেও দেখেছি। বেদেদেরকে কেউ পছন্দ করত না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ওরাও মানুষ আমরাও মানুষ সবার পরিচয় হচ্ছে মানুষ। কিন্তু এত ভেদাভেদ কেন জানিনা? আমাদের সমাজটা এরকম অনেক শ্রেণীবিন্যাস করে চলাফেরা করে মানুষ। এখনো আছে অনেকেই দেখবেন যে ক্লাসিফিকেশন মেনে চলে। কাদের সাথে কার বসবাস কে কার সাথে মিশবে সেই চিন্তা ভাবনায় এখনো মেতে আছেন মানুষ।