একটি মজার ঘটনা ছোটবেলার
Copyright Free Image Source: Pixabay
আজকে আমার শরীর বেশ খারাপ । প্রচন্ড মাথা ব্যাথা আর কাশি, সেই সাথে গায়ে প্রচুর ব্যাথা । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই অমনি করোনা টেস্ট করলাম বাড়িতে বসেই । রেজাল্ট নেগেটিভ এলো । একদিক থেকে স্বস্তির এটা । কাল রাতে মেবি প্যারাসিটামল খেতে ভুলে গিয়েছিলাম । তাই এমন দশা হয়েছে । যাই, হোক শরীর খারাপ নিয়েও পোস্ট করছি । এর উপর সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটা ঝামেলায় পড়ে খেতেও দেরি হয়ে গেলো । সকালের খাবার খেতে খেতে সেই ৪ টে বেজে গেলো । যাই, হোক এখন সব নরমাল ।
খুব ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা শেয়ার করতে চলেছি আজ । তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি । গ্রামের স্কুলে । আমাদের সময়ে দুর্গাপুজোর সময়ে ভিউ কার্ড (view card) কেনা, সংগ্রহ করা এবং চালাচালি হতো । নানান ধরণের ভিউ কার্ড পুজোর মেলায় পাওয়া যেত । ষষ্ঠীর দিন থেকে আমরা ছোটরা দলবেঁধে পুজোর মেলায় যেতাম ।
নানান ধরণের ভিউ কার্ড মিলতো । কোনটা ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, কোনটা পুজোর শুভেচ্ছা কার্ড, কোনটা হিন্দু দেব-দেবীর, কোনটা জীব জন্তুর, কোনটা সিনেমার নানান দৃশ্যের, কোনটা টিভি সিরিয়ালের । নানান রঙের নানান দৃশ্যাবলী পাওয়া যেত এসব ভিউ কার্ডে । ভিউ কার্ডের সাইজ ছিল ৪ ইঞ্চি বাই ৩ ইঞ্চি । পুরো কাগজ । এক পিঠে ছবি, আরেক পিঠ সাদা । এই সাদা পিঠে আমরা শুভেচ্ছা বার্তা সহ নানারকম মজাদার কথা লিখে নিচে নাম সই করে দিতাম ।
এরপরে সেগুলো নিজেদের মধ্যে চালাচালি হতো । বেশ মজার ছিল পুরো ব্যাপারটা । তো, সেবার ভারী একটা মজার ব্যাপার ঘটলো এই ভিউ কার্ড নিয়ে । পুজোর কিছুদিন আগে আমার ছোটবেলার এক বন্ধু এবং সহপাঠী আমাদের বাড়ি এসে একটি ম্যাজিক দেখালো ।
তার নাম ছিল অনুপম । তো অনুপম আমাদের সামনে এক খন্ড সাদা কাগজে পেন্সিলের শীষের কালো গুঁড়ো একটু ঢেলে দিয়ে হাত বুলিয়ে দিলো । সঙ্গে সঙ্গে কি সুন্দরভাবে তার নাম অনুপম লেখাটি ফুটে উঠলো সাদা কাগজের বুকে । আমরা তাকে যা লিখতে বললাম সঙ্গে সঙ্গে সে হাত দিয়ে কাগজটা আড়াল করে কি দিয়ে জানি লিখলো । তারপরে আমাদেরকে দেখালো । আমরা খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখলাম, না তো কিছুই লেখা নেই তো । এক খন্ড সাদা কাগজ শুধু ।
এরপরে, আবার পেন্সিলের শীষের গুঁড়ো ঢেলে হাত বুলিয়ে দিলো । সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মতো আমাদের নামগুলো ফুটে উঠলো সাদা কাগজের বুকে । অবাক বিস্ময়ে, খুশিতে আমরা সবাই আত্মহারা হয়ে গেলাম ।
অনেক রিকোয়েস্ট করা সত্ত্বেও অনুপম কিন্তু তার ম্যাজিকের রহস্য জানাতে রাজি হলো না । শেষমেশ পরেরদিন তার বাড়ি গিয়ে গিয়ে বলে আসলাম যে সামনে কিন্তু পরীক্ষা । ব্যাস, সুড়সুড় করে রাজি হয়ে গেলো বাছাধন । আমি পরীক্ষার হলে তাকে না বলে দিলে তাকে পাশ করানোর সাধ্যি কারো নেই ।
ম্যাজিক শিখেই অমনি সব্বাইকে শিখিয়ে দিলাম টিফিন পিরিয়ডে । বেচারি অনুপম । তার আর কোনো দাম থাকলো না । সবাই শিখে গেলো চমকপ্রদ এই মাজিকটি ।
আসলে মাজিকটি খুবই সহজ সরল ছিল । কিন্তু, আমাদের ছোটদের কাছে তাইই বিরাট কিছু ছিল । ম্যাজিকের রহস্যটা অতি সরল । ধবধবে সাদা একখন্ড কাগজে এক টুকরো মোম দিয়ে কোনো কিছু লিখলে সাদা চোখে সেটা অদৃশ্য থাকে । কিন্তু, পেন্সিলের শীষের কালো গুঁড়ো ঘষলে সেগুলো সেই অদৃশ্য মোমের রেখার উপরে আটকিয়ে যেতো । তাই, লেখাগুলো ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠতো ।
ভারী মজার তাই না ?
এখন উপসংহারে আসি । সেবছর পুজোর মেলায় আমরা প্রচুর ভিউ কার্ড কিনেছিলাম । ভিউ কার্ডের পিছনে সবাই অদৃশ্য লেখা লিখে নাম সই করে একে ওকে গিফট করেছিলাম । আমিও দিয়েছিলাম আমার ক্লাসের সবাইকে । "শারদীয়া পুজোর শুভেচ্ছা" লিখে । বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকেই পেয়েছিলাম অদৃশ্য শুভেচ্ছা বার্তা লেখা কার্ড । সবাই-ই আমার মতো শারদীয়া শুভেচ্ছা বার্তা লিখেছে । শুধু, দুটো কার্ড এ লেখা অন্যরকম ছিল ।
একটি পেয়েছিলাম অনুপমের কাছ থেকে । লেখা ছিল "গবেট" ।
আরেকটা আমার এক সহপাঠিনীর কাছ থেকে । ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম সেদিন তার অদৃশ্য লেখাটা পড়ে । আমি আবার একটু ছোটবেলায় বেশি লাজুক ছিলাম তো । পড়ে মনে হয়েছিল , ছিঃ ছিঃ লজ্জা শরম বলে কিছু নেই মেয়েটির !
--শেষ--
দাদা ওই সময়গুলো আসলে আমাদের স্বর্ণযুগ ছিল। আমরা ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়েই অনেক মজা পেতাম বা করতাম। আপনার মত আমারও ছোটবেলায় ভিউ কার্ড কেনার অনেক নেশা ছিল বলতে পারেন কিনে কিনে জমাতাম। কিন্তু আমরা ঈদের সময় শুভেচ্ছা বার্তা দিতাম ঈদ কার্ডে। যাইহোক দাদা অনুপমের অদৃশ্য লেখা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে আপনি ওর ম্যাজিক নষ্ট করেছেন বলেই হয়তো রাগ করে রেখেছে। কিন্তু আমরা সহপাঠিনি অদৃশ্য কি লিখল যাতে আপনি লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন?? হ্যাঁ ? হ্যাঁ?
amen
মেয়েটির লজ্জা আছে,আর আপনার একটু বেশিই আছে দাদা।😀
এবার বুঝতে পেরেছি বিষয়টা।
ছোটবেলায় এই ভিউকার্ড কত যে কিনতাম। বিশেষ করে নায়ক নায়িকাদের গুলো বেশি কিনতাম। স্কুল ছুটি হলেই পাশের দোকানে চলে যেতাম এই ভিউকার্ড কেনার জন্য।
আসলেই তো বিষয়টা খুব মজার। একবার চেষ্টা করে দেখতে হয়। অনুপম তো আপনাকে গবেট লিখবেই। এত সুন্দর জাদুটা নষ্ট করে দিলেন। কিন্তু আপনার সহপাঠিনী কি লিখেছিল বললেন না তো। কি দেখে এত লাল হয়ে গিয়েছিলেন।
প্রথমেই বলব দাদা এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আপনি সকালের খাবার বিকেল চারটায় খেলে কি করে হবে? নিজের শরীরের দিকে একটু যত্ন নিয়েন। তারপর আপনার লেখাটা চমৎকার হয়েছে। ছেলে বেলার দারুন অনুভূতি শেয়ার করেছেন আপনি। আপনার গল্পটা পড়ে আমারও ছোটবেলায় ভিউ কার্ড গুলোর কথা মনে পড়ে গেল। বিভিন্ন অকেশনে আমরা এগুলো চালাচালি করতাম। খুবই মজার ছিল ।আর আপনার বন্ধু আপনার উপরে রেগে নিশ্চয়ই লেখাটা লিখেছিল।আর শেষের লাইনটা ছি ছি লজ্জা শরম বলে কিছু নেই মেয়েটার এই লাইনটা চমৎকার ছিল ।মেয়েটি কি লিখেছিল? তা তো বললেন না।
🤣🤣শেষমেশ গবেট বললো😂।মজা পেলাম।কিন্তু কথা হচ্ছে,দ্বিতীয় কার্ডে কি লেখা ছিল।আমি যা ভাবছি,তাই নাকি?😝
যাইহোক,দাদা জ্বর সর্দি থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন।ভালোবাসা নিয়েন😊
দাদা প্রথমে আপনার সুস্থতা কামনা করছি এবং করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসাতে আরও বেশি ভালো লাগছে। যাই হোক আপনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন এই দোয়া রইল। তবে আজকে আপনার ছোটবেলার ঘটনা পড়ে খুবই ভালো লাগলো ছোটবেলা আপনার বন্ধু অনুপম খুবই সুন্দর ম্যাজিক দেখায় আপনাদের। আর এই ম্যাজিক আপনি শিখতে চেয়েছিলেন কিন্তু সে আমাদের শিখালো না। বুদ্ধি খাটিয়ে বাড়িতে গিয়ে শুধু বললেন সামনেই পরীক্ষা। আপনার পরীক্ষার কথা শুনে অনুপম শেষ কারণ তাকে না দেখালে পাস করার সাধ্য ছিল না। এটা ছিল তার দুর্বল পয়েন্ট। যাই হোক সে আপনাকে শিখালো এবং আপনি সবাইকে শিখিয়ে দিলেন। তার কোনো দামই থাকল না। বিষয়টা কিন্তু আমার খুবই ভালো লেগেছে। অনুপমকে খুব অল্পতেই পোষ মানিয়ে নিয়েছিলেন হাজাহা। যাইহোক আছে গল্পটি অনেক ভালো লাগছে আমার।
প্রথমেই অন্তর থেকে আপনার সুস্থতা কামনা করছি। করোনা নেগেটিভ এসেছে জেনে খুশি হলাম। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ভিউ কার্ডের ম্যাজিকটি দারুন লেগেছে। আপনার বন্ধুটির বুদ্ধি আছে বলতে হবে।
গবেট লিখা কার্ডটা ঠিক আছে বন্ধু হিসেবে ও বোনাস দিয়েছে কিন্তু আপনার চোখ মুখ লজ্জায় লাল করা কার্ডে কি লিখা ছিল জানার অপেক্ষায় রইলাম 🤗
দোয়া সবসময়ই রয়েছে 🤲
একজন মানুষের দুর্বল স্থানে আঘাত করে অনেক কিছু জেনে নেওয়া সম্ভব। কারণ মানুষ তার দুর্বলতার কাছে সর্বদা হেরে যায়। অবশ্য ঘটনাটি পড়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে।মানুষের জীবনে এমন বিচিত্রময় অনেক স্মৃতি রয়েছে।
আপনার প্রথমে লেখা টুক পড়েতো মনে করেছি করোনা হয়েছে যাক ফলাফল নেগেটিভ এসেছে শুনে ভালো লাগলো। আর দাদা আপনার শরীর খারাপ আপনি একটু ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন নিজের খেয়াল রাখবেন। ছোটবেলায় এ ধরনের ভিউ কার্ড গুলো মনে হয় কমবেশি সবাই কিনতো আমিও কত কিনেছি আমার গুলো বাসায় এখনো আছে। আপনার ভিউ কার্ডের সাইজও দেখছি মনে আছে। ভাগ্যিস ম্যাজিকটি আপনি শেষ পর্যন্ত শিখেছিলেন এবং আমাদেরকেও শিখালেন তা না হলে আমার তো শুধুমাত্র মাথার ভিতরে ঘুরপক্ষ খেত যে এটা কি করে সম্ভব। দাদা এটা আপনি কি করলেন আপনার সহপাঠীনি কি লিখেছিল সেটা তো আমরা জানতে পারলাম না আপনি তো একা একাই লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন।