প্রচন্ড তাপদাহে শরীরকে সুস্থ রাখবেন যেভাবে - আমার একডজন টিপস
copyright free image source : PixaBay
এ বছর বাংলা শুভ নববর্ষের পর পরই যে গরম পড়েছে তাতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার অবস্থা । ১৪ ই এপ্রিল ছিল বাংলা নববর্ষ, আর তার ঠিক চার দিন পরেই ১৮ ই এপ্রিল কোলকাতায় দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০.২ ডিগ্ৰী । ঠিক ওই সময়টাতেই রাজস্থানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৯ ডিগ্রী । ভাবুন কী অবস্থা ! আমাদের কলকাতা হলো নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এলাকার, আর রাজস্থান হলো গিয়ে মরুভূমির দেশ ।
আসলে কি জানেন আমাদের দেশ এখন আর নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্গত কোনোক্রমেই বলা চলে না, এখন শুধুই গ্রীষ্মপ্রধান দেশ বলা যেতে পারে । বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের জেরে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশে ।
একটু পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা দেখতে পাবো যে বিগত বছরগুলির তুলনায় বর্তমান বছরগুলিতে এখন আরো বেশি করে গরম পড়ছে । এই ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে গরম আরো বৃদ্ধি পাবে । হয়তোবা মরুকরণের ইফেক্ট শুরু হয়ে যাবে খুব শীঘ্র । এর পেছনের মূল কারণ কিন্তু একটাই - ক্রমাগত বনভূমি উজাড় করে ফেলা, যথেচ্ছ হারে গাছপালা কেটে সাফ করে দেওয়া, কিন্তু, সে অনুপাতে গাছপালা না লাগানো । যত দ্রুত হারে পৃথিবী থেকে বনভূমি হ্রাস পাবে তত দ্রুত গতিতে বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে ।
এ বছর তো চৈত্র মাসেই অসম্ভব গরম পড়েছিল । বৈশাখের আগমনের পূর্বেই গরমের চোটে চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গিয়েছিলো । আর বৈশাখের একদম শুরুর দিকে ৪৪ ডিগ্রী অব্দি টেম্পেরেচার ছাড়িয়েছিলো। কোলকাতার কাছে কোথায় লাগে মরুশহর জয়পুর । মরুশহর জয়পুরের চাইতেও রোদের তেজ আরো বেশি খর ছিল । এই প্রচন্ড গরমে চারিদিকে বেশ কয়েকদিন ধরে লু বইছে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমবঙ্গে হিট স্ট্রোকে বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যে ।
এই প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে জলশূন্যতা একটা খুবই কমন ইস্যু, আর এই জলশূন্যতা আমাদের শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এই গরমে সুস্থ থাকাটাই সব চাইতে বড় চ্যালেঞ্জ । যদিও আমরা সবাই কম বেশি গ্রীষ্মকালীন সময়ে শরীর সুস্থ রাখার টিপস জানি, তবুও আজ আমি আমার কিছু নিজস্ব মতামত ও টিপস শেয়ার করলাম আজ । আশা করি আপনাদের কাজে লাগতে পারবে ।
০১ এই গরমে শরীর হাইড্রেট রাখা ভালো থাকার একমাত্র সঠিক কারণ । তাই বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ জল পান করুন । একবারে সর্বোচ্চ ২ গ্লাস জল পান করুন । সারা দিনে মিনিমাম ৩ লিটার জল পান করুন । কিন্তু, দিনের বেলায় ঘন্টায় একবার অন্তত জল পান করবেন মাস্ট ।
০২ ফ্রিজের বরফ ঠান্ডা জল পান করা সীমিত করুন । নরমাল টেম্পেরেচারের জল পান করা শরীরের পক্ষে ভালো । বারে বাড়ে ফ্রিজের ঠান্ডা জলে তৃষ্ণা নিবারণ করলে তা শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে । ফ্রিজের বরফ শীতল জল হার্টের রক্ত নালীগুলোকে সংকুচিত করে, হজমের গন্ডগোল করে এবং দ্রুত গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করে ।
০৩ দিনে অন্তত দুই গ্লাস লেবু, নুনের শরবত করে খান । আমরা গরমে প্রচুর ঘামি । এই ঘামের সাথে শরীর থেকে নুনও বেরিয়ে যায় প্রচুর । ফলে নুন সংকট দেখা দিতে পারে পেশীতে । ফলশ্রুতিতে পেশী ক্র্যাম্প হয়ে যেতে পারে ।
০৪ গরমের দিনে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ব্যালান্স ঠিক রাখতে ডেইলি অন্তত একটি করে ডাবের জল পান করার চেষ্টা করুন । ডাবের জল হলো প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইটের উৎস । এতে শরীর সব চাইতে বেশি সতেজ থাকে ।
০৫ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খান গরমের দিনগুলিতে । গরমকালে প্রচুর পরিমাণে পাতি ও গন্ধরাজ লেবু ওঠে বাজারে । এক গ্লাস জলে একটি পাতি লেবুর রস চিপে বের করে তার সাথে এক চামচ চিনি ও এক চিমটি নুন মিশিয়ে ওপরে গন্ধরাজ লেবুর রস হালকা করে দিয়ে শরবত বানিয়ে খাবেন । দিনে অন্তত দুই গ্লাস ।
০৬ গরমে বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন বাড়িতে । শরবত, স্যুপ, স্ট্যু এসবের পাশাপাশি ডাল, ভাত, মাছের ঝোল খাবেন । খাবার পাতে অবশ্যই লেবু রাখবেন । এই সময়টাতে মাংস ও গুরুপাক রান্না যথাসাধ্য কম খাবেন । খুব ভোরে ব্রেকফাস্ট করবেন । দুপুরে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি সহযোগে ভাত, ডাল ও মাছের ঝোল খাবেন । ভাজাভুজি একদম কম খাবেন । রাতে একদম হালকা খাবার খাবেন । রাতে ভাত না খেলেই ভালো, তারপরেও যদি খান তো একদমই কম ভাত খাবেন ।
০৭ গ্রীষ্মকালীন ফলগুলি প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন । বিশেষ করে ডাব, তরমুজ, বাঙ্গি, ফুটি, বিভিন্ন মেলন জাতীয় ফ্রুট, লিচু, কলা, পেঁপে, আম (কাঁচা ও পাকা উভয়ই), কাঁঠাল, বেল, শসা, জাম এবং জামরুল এসব ফল খাবেন ডেইলি ।
০৮ গরম কালে রাস্তার ধারের কোনো ফাস্ট ফুড ভুলেও ছোঁবেন না । একই সাথে লোকাল চায়ের দোকানের চা, রাস্তার ধারের কাটা ফল এবং খোলা রাস্তার ওপরে বিক্রি করা কোনো শরবত খাবেন না । গরমকালে নানান জীবাণু আক্রমণের সব চাইতে সহজ মাধ্যমগুলো হলো ওগুলোই । টাইফয়েড ও কলেরার জীবাণুতে এই সময় বেশি সংক্রমণ হয় ।
০৯ যাঁদের প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আছে তাঁরা এই কাজটি গরমের দিনে সূর্য ওঠার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগের থেকে স্টার্ট করে সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পর অব্দি কন্টিনিউ করুন । তারপরে আর ভুলেও কোনো জগিং বা মর্নি ওয়াক অথবা কোনো এক্সারসাইজ করতে যাবেন না ।
১০ তীব্র গরমে খুব কষ্ট হলেও মর্নিং ওয়াক, জগিং বা এক্সারসাইজ একেবারে ছেড়ে দেবেন না । বরং সূর্য ওঠার একটু আগে এবং সন্ধ্যার প্রাক্কালে করুন । তবে, অবশ্যই সাথে করে ওয়াটার বটল নিতে ভুলবেন না ।
১১ সকাল দশটার পর যদি পায়ে হেঁটে বা পাবলিক যানে বাড়ির বাইরে কোথাও যান তবে সঙ্গে করে ছাতা নেবেন মাস্ট । ভুল যেন না হয় । প্রয়োজনে একটু সানস্ক্রিনও মেখে নিতে পারেন ।
১২ খুব ভোরে স্নান করার অভ্যাস করুন এ দুটি মাস । প্রতিদিন বিকেলে গা ধুয়ে ফেলবেন তবে মাথা ভেজাবেন না । গায়ে ঘাম থাকলে আগে ফ্যান চালিয়ে ঘাম শুকিয়ে নেবেন । এরপরে স্নান করবেন ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
পরিবেশ ক্রমশ তাকে নিঃশেষ করে দেয়ার প্রতিশোধ নিচ্ছে। এটা সামনের দিনগুলোতে জারি থাকবে, যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীটা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। যাইহোক যেহেতু আমরা পরিবেশ নষ্ট করেছি তাই আমাদের এই বিরুপ প্রতিক্রিয়া সহ্য করতেই হবে।
যাইহোক আপনার দেয়া টিপসগুলো কিন্তু দারুণ ছিল দাদা। আমিও মেনে চলার চেষ্টা করবো।
দাদা অনেক কার্যকরি কিছু টিপস দিয়েছেন। সত্যি আমাদের দেশ এখন আর নাতিশীতোষ্ণ নয়। তবে আপনার টিপস গুলো মেনে চলতে পারলে অনেক উপকার হবে।চেষ্টা করবো দাদা আপনার টিপস গুলো মেনে চলার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Congratulations, your post has been upvoted by @upex with a 40.46% upvote. We invite you to continue producing quality content and join our Discord community here. Keep up the good work! #upex
This is a very interesting and important post you have made.
Amidst this heat, I have learnt how to stay healthy.
One important tips I will make sure I practice is the drinking of water regularly.
Thank you so much Dada for sharing this with us ❤️❤️❤️
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 100 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.
真是精彩啊
পানির উপরেই দাদা মাইরটা বেশি পরছে। গলা বারবার শুকিয়ে যায় আবার পানি পান করি। বলতে গেলে তিন লিটারের মতে হয়ে যায় দৈনিক। বাহিরের কোনো খাবার খাওয়া হয় না এখন। তাছাড়া সকাল সকাল গোসল করার অভ্যাসটাও করছি। সারাদিন মন ও শরীর ফ্রেশ থাকে। তবে যে হারে টেম্পারেচার বাড়ছে সবাইকে সতর্ক থাকাটাই ভালো হবে। পরিবেশের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে এখন থেকেই। যাইহোক, দাদা অসংখ্য ধন্যবাদ বেশ কিছু টিপস দেয়ার জন্য। 🌸
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
এক কথায় অসাধারণ। আপনার বারোটা টিপস খুবই কার্যকর টিপস। আর এই গুলোর সাথে আমিও একমত। এই টিপস গুলো যদি কেউ কন্টিনিউ মেনে চলতে পারে তাহলে ইন-শা-আল্লাহ এত গরমেও সে ভালো থাকবে। চেষ্টা করবো দাদা আপনার দেওয়া টিপস গুলো চলার জন্য। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দারুন কার্যকর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন দাদা। এগুলো মেনে চললে আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না। চমৎকার এই পরামর্শ মূলক পোস্টের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।